পাম অ্যাভিনিউয়ের দু-কামরার ছোট্ট, স্যাঁতস্যাতে ঘরই ছিল তাঁর স্বর্গ। এই বাড়ি ছেড়ে অসুস্থ শরীরে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে🦋 চাইতেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সিওপিডি-র ক্রনিক পেশেন্ট ছিলেন বুদ্ধবাবু, তা সত্ত্বে𒀰ও ওই বাড়ি ছেড়ে যাননি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
আসলে বুদ্ধদেবের জীবন-দর্শনই তাঁকে সেই বাড়ি ছাড়ার অনুমতি দেয়নি। বরাবর সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি। অনাড়ম্বরভাবে বাঁচতে ভালোবাসতেন, তাই তো চার দশক ধরে পাম অ্যাভিনিউয়ের এই ঘরেই থাকতেন 🌸রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় ১১ বছর বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু ঠিকানা বদলাননি।
অসুস্থতার জেরে বাড়িতেই তৈরি হয়েছিল হাসপাতালের সেট-আপ। অক্সিজেন মেশিন, ওষুধপত্র ভর্তি। তার মাঝে দু-চোখ তুলে তাকালে শুধু বই আর বই। আসলে তাঁর অন্তর জুড়ে ছিল শুধুই সাহিত্য। আদ্যোপ্রান্ত সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ ছিলে🦄ন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গীতবিতান থেকে বিষ্ণু দে-র কবিতা, ইংরেজি সিনেমার বই থেকে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইতিহাস বই, তাঁর সংগ্রহে রয়েছে অন্নদাশঙ্কর রায়, শামসুর রহমান। নিজের লেখা বইও রয়েছে সেই ঘরে। শেষ বয়সে চোখে তেমন দেখতে পেতেন না। স্ত্রী, মীরা ভট্টাচার্য প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়ে শোনাতেন। দেশ-দুনিয়ায় কোথায় কী ঘটছে সব খবর নিতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচ♊ার্য।
রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে ভালোবাসতেন। অন্য গানে বিশেষ রুচি ছিল না। ঘরের দেওয়াল জুড়ে লেলিন, কার্ল মাক্সসের ছবি-মূর্তি। কাকা সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছবিও দেওয়ালে ঝোলানো। পাশে চার্লি চ্যাꦕপলিনের ছবি। এই বাড়ি ছিল বুদ্ধদেবের প্রাণের চেয়েও প্রিয়। আজ অভিভাবকহীন পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িটা। এদিন বুদ্ধদেবের বাড়িতে পৌঁছে আবেগঘন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈত🃏িক সঙ্গী গৌতম দেব। প্রাক্তন আবাসন মন্ত্রী বলেন, ‘আবাসন মন্ত্রী ছিলাম৷ বুদ্ধদাকে বলেছিলাম আপনি মুখ্যমন্ত্রী, এই ছোট ফ্ল্যাট ছেড়ে গড়িয়াহাটে আবাসন দফতরের বড় বাড়ি আছে, ওখানে এসে আপনি থাকুন৷ রাজি হননি৷’
মুখ্যম🍸ন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর নিরাপত্তার কথা ভেবেও বহুবার বাড়ি বদলের কথা বলা হয়েছিল বুদ্ধেদেব ভট্টাচার্যকে। রাজি হননি তিনি। এদিন সকাল ৮টা বেজে ২০ মিনিটে নিভে গেল কাস্তে হাতুড়ুির জ্বলজ্বলে এক তারা।
সিওপিডি-র সমস্যা বেড়েছিল বর্ষায়। তার সঙ্গে ভাইরাল অথবা ব্যাকটেরিয়াল সেকেন্ডারি ইনফেকশনে আক্রান্ত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। জ্বর থাকায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তি♌নি রাজি হননি। ভোররাতে༒ শারীরিক পরিস্থিতি আচমকা বিগড়ে যায়। নিউমোনিয়ার জেরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৪০%-এ নেমে যায়। আর ফেরানো যায়নি।
উত্তর কলকাতায় জন্ম হলেও জীবনের লম্বা সময় পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে কাটিয়েছেন বুদ্ধবাবু। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বেতন পেতেন ১০ হাজার টাকা, সঙ্গে একটা অ্যাম্বাসাডার গাড়ি। এর বাইরে কোনও সুবিধা ন𝐆েননি। স্বচ্ছ জীবনযাপনের মূর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি।
এদিন বিকালে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে লাল পতাকায় মুড়ে শেষবারের মতো যাত্রা শুরু করেছেন বুদ্ধদেব। বৃহস্পতিবার রাতে পিস ওয়ার্ল্ডে শায়িত রয়েছে মরদেহ। আগামিকাল সকালে পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভার উদ্দেশ্যে যাত্রার সঙ্গে শুরু হবে বুদ্ধদেবের অন্তিম সফর। বিধানসভা ভবনে সকাল ১১-১১.৩০ মিনিট পর্যন্ত শায়িত রাখা হবে দেহ। এরপর মুজফফর আহমেদ ভবন (দুপুর ১২-৩.১৫ মিনিট) এবং দীনেশ মজুমদার ভবনে (৩.৩০-৩.৪৫ মিনিট) পৌঁছাবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নিথর দেহ।꧙ এরপর দেহদানের জন্য নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উদ্দেশ্যে শেষযাত্রা।