বাংলা ছবির দুনিয়ায় তাঁর সঠিক কীর্তির পরিমাপ হয়নি। এমনটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন অনেকেই। তবে উত্তম-পরবর্তী বাং𝐆লা চলচ্চিত্রের অন্যতম উজ্বল নক্ষত্র তাপস পাল।
মাত্র ২২ বছর বয়সে পরিচালক তরুণ মজুমদারের হাত ধরে রুপোলি দুনিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন তাপস পাল। প্রথম ছবি ‘দাদার কীর্তি’। বাংলা ছবির জগতের এক মাইলস্টোন এই ছবি। দাদার কীর্তিই রাতারাতি সুপারস্টার বানিয়েছ🤡িল তাপস পালকে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অভিনেতাকে।
১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চন্দনগরে জন্ম তাপস পালের। হুগলির মহসিন কলেজ থেকে বায়ো সায়েন্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ছোট থেকেই অভিনয়ের প্রতি টান ছিল তাপসেরജ। কলেজে পড়ার সময় পরিচালক তরুণ মজুমদারের জহুরির চোখ হীরে চিনতে ভুল করেনি। তাই বছর ২১-এর আনকোরা নবীনকেই দাদার কীর্তির নায়ক কেদারের চরিত্রে বেছে নিয়েছিলেন।
এর পর ধারাবাহিক ভাবে বহু সুপারহিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তাপস পাল। ‘ভালবাসা ভাল💦বাসা’, ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘মায়া মমতা’, ‘সুরের ভুবনে’, ‘সমাপ্তি’, ‘উত্তরা’ ছবিগুলি তাঁকে জনপ💃্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। ১৯৮১ সালে 'সাহেব' ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পান তাপস পাল।
দেবশ্রী রায়-তাপস পাল জুটি বাংলা ছবির বক্স অফিসে অনেক নজির গড়েছে। ১৯৮৫ সালে ভালোবাসা ভালোবাসা ছবিতে প্রথমবার এক𒁃সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাঁদের। এরপর অর্পণ (১৯৮৭), সুরের সাথী (১৯৮৮), সুরের♉ আকাশে (১৯৮৯), চোখের আলোয় (১৮৮৯), মায়াবিনীর (১৯৯২) মতো অসংখ্য ছবিতে একসঙ্গে দেখা মিলেছে তাপস-দেবশ্রী জুটির।
তথাকথিত বাণিজ্য🦹িক বাংলা ছবির নায়ক হিসেবে দর্শকমনে তাপস পালের স্থান পাকাপাকি তৈরি হয়ে যায়। তবে তাঁর অভিনয় দক্ষতার ছাপ দেখা গিয়েছে মূলধারার বাইরেও বেশ কিছু ছবিতে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর 'উত্তরা' এবং 'মন্দ মেয়ের উপাখ্যান' তাঁর অভিনয় জীবনের অন্যতম মাইলস্টোন।
বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতে নিজের অভিনয়ের ছাপ রেখে গিয়েছেন তাপস পাল। এর মধ্যে মাধুরী দীক্ষিতের প্রথম হিন্দি ছবি ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অবোধ’-এ বলিউডের নায়িকার পাশে তাঁর অভিনয় বিশেষ উল্লেখযো🌊গ্য। তাপস পাল অভিনীত শেষ ছবি ৮.০৮-এর বনগাঁ লোকাল। পরিচালক দেবাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ছবি মুক্তি পায় ২০১২ সালে।
অভিনয় জীবনের মাঝামাঝি পৌঁছে রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন বাংলা ছবির সফল নায়ক তাপস পাল। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে কৃষ্ণনগর থেকে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার বিশেষ সুমধুর ছিল, এমন ⭕বলা যাবে না। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে নেমে তাপস পালের বেফাঁস মন্তব্য ঘিরে কম সমালোচনা হয়নি। নিজেকে ‘চন্দননগরের মাল’ বল𒁃ে উল্লেখ করে, বিরোধী সমর্থকদের ঘরে ছেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো তাপসের মন্তব্য দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়। তবে এর পরেও তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিতর্ক থামেনি।
২০১৬ সালে রোজভ্যালি চিটফান্ড কান্ডে নাম জড়ায় অভিনে🧸তার। সেই বছর ডিসেম্বর মাসে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন তাপস পাল। ভুবনেশ্বরে দীর্ঘ ১৩ মাস হাজতবাস করতে হয়। সিনেমায় গগনচুম্বী কেরিয়ার ততদিনে অস্তাচলে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জামিনে মুক্তি পান তাপস।
এরপর থেকেই ভেঙে পড়ে তাঁর শরীর। কিডনি এবং স্নায়ুজনিত সমস্যায শরীরে থাবা বসায়। তারই জেরে মঙ্গলবার কাকভোরে৬১ বছর বয়সে মুম্বইয়ের🐼 হাসপাতালে জীবনাবসান হল বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতার।
তাপস পালের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ টলিউড। তাঁর দীর্ঘ দিনের সহকর্মী দেবশ্রী রায় কান্নাভেজা গলায় জানালেন, ‘কিছু 🐓বলার নেই। ভাবতেই পারছি না..।অকালে চলে গেল। আমার পরিবারের মতো ছিল।'
তাঁর একাধিক ছবির পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতে, তাপস পালের কাজের দাম দিতে পারেনি বাংলা চলচ্চিত্র জগত। উত্তরা ছবির পরিচা🎶লকের কথায়, ‘ওঁর মতো ভার্সাটাইল অভিনেতা বাংলা ছবির দুনিয়ায় কম এসেছেন। ওঁর অভিনয়ের ꩲযথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল তাপস পালের। আমি ওঁকে আজীবন অভিনেতা হিসেবেই মনে রাখতে চাই।'