বৃহস্পতিবার সাত সকালে প্রয়াত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর প্রয়াণে রাজনীতির রং ভুলে শোকস্তব্ধ সকলে। সকলে যখন শোকপ্রকাশে ব্যস্ত তখনই এক 'অন্য অধ্যায়'-এর কথা তুলে ধরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ‘বিঁধলেন’ বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন শেষযাত্রায় শায়িত, তখন নিজের বিরুদ্ধে ঘটা অন্যায় নিয়ে গর্জে উঠলেন তসলিমা। আরও পড়ুন-‘গান স্য়ালুটটা হতে দেবেন না…’, বুদ্ধ-পত্নীকে অনুরোধ অনীকের, মমতার ইচ্ছে নিয়ে কী জবাব মিܫলল মীরা ভট্টাচা💙র্যের?
ফেসবুক পোস্টে লেখিকা জানান, কেন বুদ্ধদেবের মৃত্যুতে এখন আর চোখের জল ফেলবেন না তিনি। একটা সময় যে বুদ্ধদেব ভট্♏টাচার্যর সঙ্গে তাঁর সখ্যতা ছিল, আজ কেন এতটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তিনি লেখেন, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মারা গিয়েছেন… ২০০৩ সালের আগে এরকম খবর শুনলে আমি হয়তো চোখের জল ফেলতাম। কিন্তু তিনি আমার চোখের জল অনেক বছর ঝরিয়েছেন। তিনি বেঁচে থাকাকালীন। তাই চোখ থেকে আজ কোনও জল ঝরল না তাঁর জন্য। আসলে কোনও জল আর অবশিষ্ট নেই।’
এরপর তিনি লেখেন, ‘২০০২ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে সখ্য ছিল। তারপর তাঁর কী হলো কে জানে, ২০০৩ সালে বলা নেই কওয়া নেই আমার দ্বিখণ্ডিত বইটি তিনি নিষিদ্ধ করলেন। সেদিনই মনে হয়েছিল আমি তাঁর চেয়ে খাঁটি বামপন্থী। আমি নাস্তিক, আমি নারীবাদী𒈔, আমি ধর্ম বর্ণ শ্রেণী লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের সমতা এবং সমানাধিকারে বিশ্বাস করি। একটি মৌলবাদি দেশে কিশোর বয়স থেকে আমার আদর্শের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছি। আমার দ্বিখণ্ডিত বইটিতে আমি রাষ্ট্রের কোনওরকম ধর্ম থাকার বিরুদ্ধে লিখেছিলাম। রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে পৃথক করার জন্য লিখেছিলাম বলে তিনﷺি আমার বই নিষিদ্ধ করেছিলেন। ভাবা যায়, একজন বড় বামপন্থী নেতা রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকা সমর্থন করতে চান। যুক্তি দেন, তা না হলে মুসলমানরা রাগ করবে'।
লেখিকা আরও জানান, 'হাইকো💖র্টে কলকাতার মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর দ্বিখণ্ডিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করলো। জয়ী হলো। দ্বিখণ্ডিত থেকে বুদ্ধবাবুর জারি করা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল। তিনি আমার ওপর আগুন হয়ে রইলেন রেগে। আরে মামলা তো আমি করিনি, জয়ী তো আমি হইনি, সুজাত বাবুরা হয়েছে। এরপর থেকেই আমাকে দেশ থেকে, সম্ভব না হলে কলকাতা থেকে তাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠলেন। ২০০৭ সালে আমাকে সাড়ে চারমাস গৃহবন্দি রেখেছিলেন, যেন অতিষ্ট হয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাই। কিন্তু কোথাও যাইনি আমি। শেষ পর্যন্ত একটা কুৎসিত নাটক করে তাড়িয়েছিলেন। তারপর কী হলো? আপদ তো বিদায় হলাম। তিনি নিশ্চয়ই খুব আনন্দে ছিলেন তখন। আর অসহায় নিরীহ নির্বাসিত, নির্যাতিত, সৎ ও আপসহীন মানুষটির জীবন কতটুকু দুর্বিষহ হয়েছিল, সে কথা আজ আর নাই বললাম।
শুনেছি পরে একটি বই লিখেছেন তিনি। তাঁর কী কী ভুল হয়েছিল তাঁর ꦜশাসনামলে, কী কী ভুল তিনি করেছিলেন , সবই লিখেছ🌳েন। শুধু আমাকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিনা দোষে যে তাড়িয়েছিলেন, সেই কথাটা উল্লেখ করেননি। এর মানে এ নিয়ে তাঁর কোনও অনুশোচনা ছিল না, তিনি মনে করতেন তিনি যা করেছিলেন ভাল করেছিলেন। আমার স্বপ্ন,সাধ সব চুরমার করে দিয়ে তিনি ভাল করেছিলেন। একজন বাংলা-অন্ত-প্রাণের কাছ থেকে বাংলাকে ছিনিয়ে নিয়ে তিনি ভাল করেছিলেন'।
একটা সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর জন্য প্যারিস থেকে উপহার আনতেন তসলিমা, সেই বুদ্ধদেব তাঁকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করবেন! ভাবতেও পারেননি তিনি। লেখেন, 'আমি ইউরোপ থেকে বাংলা ভাষার টানে, প্রাণের টানে, কলকাতায় বাস করতে গিয়েছিলাম, যেহেতু বাংলাদেশের কোনও সরকারই আমাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনি নন্দনে যে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে আড্ডা দিতাম, প্যারিস থেকে তাঁর💟 জন্য তিনি যা চাইতেন উপহার এনে দিলাম, সেই মানুষটি একসময় আমার বাংলা মা'কে, বাংলায় আমার শেষ আশ্রয়টিকে চিরকালের মতো টেনে নিয়ে যাবেন আমার পায়ের তলা থেকে। মমতা দিদি আমার ব্যাপারে বুদ্ধবাবুরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেন, সুতরাং তিনিও আমাকে একই অচ্ছুৎ হিসেবে ট্রিট করবেন, এতে অবাক হই না'।
সবশেষে বুদ্ধদেবের চিরশান্তি কামনা না করলেও জীবনে করে যাওয়া ভালো কাজগুলির জন্য ‘লাল সেলাম’ জানালেন তসলিমা। বললেন, ‘আজ বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে পুরোনো কথা স্মরণ এলো। আমি আত্মায় বিশ্বাস করি না, পরলোকে বিশ্বাস করি না। তাই আজ অন্য সবার মতো বলতে পারলাম না রেস্ট ইন পিস, অথবা 🍨যেখানে থাকুন ভাল থাকুন ইত্যাদি। তবে তাঁর জীবনে তিনি ভাল যেসব কাজ করেছেন, তার জন্য বলবো, কমরেড, 🌃লাল সেলাম’।