Durga Puja 2024: শোলার সাজ থেকে সোলার লাইট, হাতিবাগানের কুণ্ডু বাড়িতে পূজিতা ব্যাঘ্রবাহিনী আসলে প্রকৃতি-প্রহরিণী

উত্তর কলকাতার হাতিবাগান মোড়ে রয়েছে বহু ইতিহাসের সাক্ষী স্টার থিয়েটার। তার পাশে কলকাতা পুরনিগমের একটি কার্যালয়। যার গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে নটী বিনোদিনী সরণী। এই রাস্তাতেই রয়েছে নটী বিনোদিনীর বাড়ি। সেই বাড়ির উলটোদিকে থাকেন কুণ্ডুরা। তাঁদের বাড়ির বয়স ১৯০ বছর!এই গৌরচন্দ্রিকার হেতু আসন্ন দুর্গোৎসব। আসলে গত কয়েক বছর ধরেই, পুজোর সময়টায় হাতিবাগানের এই কুণ্ডু বাড়িতে ঢুঁ মারেন বহু মানুষ। যাঁদের সঙ্গে আদতে এই বাড়ির কোনও সম্পর্ক নেই। মানুষ যান অন্য টানে। সেই টানের উৎস, স্বয়ং দেবী দুর্গতিনাশিনী। কুণ্ডু বাড়ির দুর্গাপুজো নজর কেড়েছে আমবাঙালির।অথচ, এই পুজো বয়সে কিন্তু একেবারেই নবীন। তা সত্ত্বেও পুজো নিয়ে মানুষের মধ্যে এত আগ্রহ কেন? বাড়ির বর্তমান কর্তা জয়দীপ কুণ্ডু মনে করেন, হয়তো একেবারে শুরু থেকেই পুজোর মাধ্যমে তাঁরা যেভাবে পরিবেশ রক্ষা ও ব্যাঘ্র সংরক্ষণের বার্তা দিয়ে এসেছেন, সেটা মননশীল বাঙালির মনে ধরেছে।প্রসঙ্গত, বন্যপ্রেমী জয়দীপ নিজে এমন একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, যারা বহু বছর ধরে বাঘ, মূলত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ এবং সেইসঙ্গে বনাঞ্চল রক্ষা নিয়ে সমানে কাজ করে চলেছে। জয়দীপের স্ত্রী সুচন্দ্রা কুণ্ডুও সেই লড়াইয়ে তাঁর সহযোদ্ধা। তিনি নিজেও পরিবেশ রক্ষা নিয়েই কাজ করেন।পরিবেশ যোদ্ধা এই দম্পতি কিন্তু আদ্যোন্ত বাঙালি। আর, দুর্গোৎসব ছাড়া বাঙালি নিজের অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারে কি? পারে না। পারে না বলেই বহু দিনের মনোবাসনা পূর্ণ করতে নিজেদের বসত ভিটেতেই দশভুজার আবাহন শুরু করেন জয়দীপ-সুচন্দ্রা। কুণ্ডু বাড়ির পুজোয় মহিষাসুরমর্দিনী কিন্তু সিংহবাহিনী নন। তাঁর বাহন এখানে বাঘ। কেন এই বদল? জয়দীপ জানালেন, এত বছর ধরে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ নিয়ে তাঁদের লড়াই চলছে। আর, জগজ্জননী মা দুর্গা তো শুধুমাত্র দুষ্টের দমন করেন না, তিনি শিষ্টের পালনও করেন।তাই, এই বিপুলা প্রকৃতি, মানুষের অত্যাচারে যা আজ নিদারুণ অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে, সেই প্রকৃতির রক্ষায় তো মহামায়ারই শরণাপন্ন হতে হবে। ঠিক এই কারণেই তিনি এখানে ব্যাঘ্রবাহিনী।জয়দীপ জানান, মানুষকে আমাদের জাতীয় পশু বাঘ সম্পর্কে সচেতন করতেই দেবীর প্রতিমায় সিংহের বদলে বাঘ আনা হয়েছে। তবে, এটাও ঠিক যে বাংলায় দেবী দুর্গার বাহন সিংহ হলেও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে তাঁকে ব্যাঘ্রবাহিনী হিসাবেও দেখা যায়।পাশাপাশি, কুণ্ডুবাড়ির পুজোয় দেবীর সাজসজ্জাতেও পরিবেশরক্ষার বার্তা নজর কাড়ে। একচালা প্রতিমার পিছনে যে চালচিত্র থাকে, তা সাজানো হয় মূলত বাঘের নানা ধরনের প্রতিকৃতি ব্যবহার করে। এবারও যার কোনও ব্যতিক্রম হচ্ছে না।এছাড়া, দশভুজা ও তাঁর ছেলেমেয়েদের ঘিরে থাকে নানা প্রজাতির পশু, পাখি, মাছ, সরীসৃপ ও পতঙ্গ। দেবী দুর্গার সঙ্গে তাদেরও পুজো করা হয়, ঈশ্বরী তথা প্রকৃতির সন্তান হিসাবে। এটাও এই প্রতিমার এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। প্রতিমার সাজে কেবলমাত্র শোলা ব্যবহার করা হয়। যা সম্পূর্ণভাবে বায়োডিগ্রেডেবল।প্রতিমা তৈরি হয় বাড়িতেই। শিল্পী আসেন বহরমপুর থেকে। প্রতিমাকে সাজিয়ে তুলতে কোনও রাসায়নিক রং ব্যবহৃত হয় না কুণ্ডু বাড়ির পুজোয়। মূলত খড়িমাটি এবং তার সঙ্গে নানা ধরনের জৈব রং মিশিয়ে সেই মিশ্রণই রং করার জন্য ব্যবহার করা হয়। শিল্পীর পাশাপাশি সেই রঙের কাজে হাত লাগান বাড়ির সদস্য, আত্মীয় ও বন্ধুরা।এই পুজোর আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, পুজোয় ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিবেশবান্ধব উৎস। পুজোয় দিনগুলোয় কুণ্ডুদের বাড়ির ছাদের একপাশেই সোলার প্যানেল লাগানো হয়। পুজোয় যতটুকু বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, তা আসে এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। আপৎকালীন ক্ষেত্রে সাধারণ বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও মায়ের পুজোয় সূর্যালোকই বিদ্যুতের অধিকাংশ চাহিদা মিটিয়ে দেয়।কুণ্ডু বাড়ির পুজো হয় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে। তাই, এবারও তাঁদের পুজোর মেয়াদ চারদিন। সপ্তমীতে কলাবউ স্নান দিয়ে যা শুরু হয়, শেষ হয় দশমীর নিরঞ্জনে। পুজোর দিনগুলোয় ভোগের ব্যবস্থা থাকে।কুণ্ডু বাড়ির কুলদেবতা হলেন যথাক্রমে গোপাল এবং গণপতি। তাঁদের ভোগ সর্বদা নিরামিষ হয়। সেই একই কারণে দেবী দুর্গার ভোগ হিসাবেও নানা ধরনের নিরামিষ পদ রান্না করা হয়। খিচুড়ি, পোলাও থেকে শুরু করে নানা ধরনের ভাজা, তরকারি, ফল, মিষ্টি ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়। পুজোর চারদিনই করা হয় নানা আয়োজন।এবারের পুজোয় আরও একটি অতিরিক্ত আয়োজন থাকছে। পুজোয় একটি বিশেষ প্রকাশনা করছেন কুণ্ডু বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িত সদস্যরা। এবারের পুজো উপলক্ষে ১২টি পিকচার পোস্ট কার্ড প্রকাশ করবেন তাঁরা। যাতে মূলত ব্যাঘ্রবাহিনীকে নিয়ে নানা উপস্থাপনা থাকবে।জয়দীপ জানান, এই উদ্যোগের পিছনেও সেই একই উদ্দেশ্য কাজ করছে। মানুষকে বাঘ ও প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন করতেই মা ব্যাঘ্রবাহিনীর শরণাপন্ন হচ্ছেন তাঁরা। যদিও এই প্রকাশনা করা হচ্ছে সীমিত সংখ্যায়। যাঁরা এবছর কুণ্ডু বাড়ির পুজো দেখতে যাবেন, সীমিত সংখ্যায় তাঁদের এই পোস্ট কার্ড বিতরণ করা হবে।

Durga Puja 2024: শোলার সাজ থেকে সোলার লাইট, হাতিবাগানের কুণ্ডু বাড়িতে পূজিতা ব্যাঘ্রবাহিনী আসলে প্রকৃতি-প্রহরিণী

Latest News

Women World Cup 2024 News in Bangla

Trending Topics

Sections

বাংলার মুখ

ময়দান

ক্রিকেট

ভাগ্যলিপি