রণবীর ভট্টাচার্য
গরমের ছুটি নিয়ে সবারই কম বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। কারোর জীবনে পুরী-দীঘা-দার্জিলিং, কারও কুলু-মানালি বা কাশ্মীর, কারও জন্য মামার বাড়ির আদর আর দূরদর্শনের ছুটি ছুটি, ৯০-এর দশকে গরমের ছুটি ছিল বেশ অন্য রকম। বাইরের দাবদাহ, আর বাড়িতে আমপোড়ার সরবত, এই ঘরোয়া রংমিলন্তিতে ছোটবেল🅠া কেটেছে অনেকেরই। কিন্তু নতুন শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকেই সব গোলমেলে ঠেকছে। গরম শুরু হচ্ছে সেই ফেব্রুয়ারিতে আর এপ্রিলের শুরুর দিকেই চল্লিশ ছুঁয়ে ফেলছে পারদ। আজ আবার সঙ্গত কারণেই বাড়তি ছুটির ঘোষণা হল। পরিবেশ কি এতটাই বদলে গেল কয়েক দশকে?
পরিবেশ নিয়ে কমিশন, নিয়ম, প্রটোকল - রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে দেশীয় স্তরে, আলোচনা হয়েই চলেছে। কিন্তু মেনে চলার প্রশ্ন যখন ওঠে, তখন ব্যাপারটা অনেকটাই নিজের পছন্দমত হয়ে দাঁড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে ধারণা এরকম যে 'আমরা বেঁচে থাকতে এরকম হবে না' গোছের। তবে এখন বোধহয় আর আয়েশ করার জো নেই। খাস পশ্চিমবঙ্গে আগে স্কুলের ক্ষেত্রে গরমের ছুটি এক মাস ছিল, গ্রাম বাংলায় বর্ষাকালীন ছুটি বরাদ্দ ছিল, সাথে পুজোর ও শীতকালের ছুটি। উত্তরবঙ্গের কথা একটু হলেও আলাদা। আর এখন এক মাসের গরমের ছুটি দুই মাসের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছে। এর কারণ প্রকৃতি ও আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনা। মাঝে মধ্যে ঝড় ও বৃষ্টির সংকেত থাকছে বটে, কিন্তু সেখানে স𝔍াইক্লোনের ভ্রুকুটি রয়েছে। আমফান পরবর্তী 🍃সময়ে কোনও ঝড় কেউ আর হেলাফেলা করার সুযোগ নেই বলে চলে।
গরমের মধ্যে অনেকেই এসির মধ্🅺যে শান্তি খুঁজছেন। বিদ্যুতের চাহিদাও তুঙ্গে, যা গাণিতিক নিয়মে স্বাভাবিক বটে। কিন্তু প্রশ্ন উঠে আসছে যদি এই দীর্ঘদিন গরমকাল থাকে, তাহলে ভবিষৎ কি হতে চলেছে। আর যাই হোক, শরৎ ও হেমন্তের এখন দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। গ্রীষ্ম, বর্ষা আর অল্প শীত - এই নিয়ে গ্রাম বাংলা এখন অভ্যস্ত হতে চলেছে। এই তীব্র দাবদাহের মধ্যে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার মুখে, পানীয় জলের সংকট, দিনভর অস্বস্তি। এছাড়া করোনার ফিরে আসার ভয় তো রয়েছেই। তাই ছোট থেকে বড়, সকলেই আজ ভাবিত এই দীর্ঘ অসহনীয় গরম কাল নিয়ে। সামনের দিনে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে মরুভূমির মতো আবহাওয়া হওয়া অস্বাভাবিক হবে না। তাই দেরি না করে, তৃণমূল স্তর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবার ও অ্যাকশন প্ল্যান ফলপ্রসূ করার সময় এসেছে। নইলে তিন মাসের গরমের ছুটিও গরম থেকে মুক্তি দিতে পারবে না কচিকাচাদের।