- উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়
ইউটিউবার
ছোটবেলায় বাড়ির বড়দের মাঝে মাঝেই দেখতাম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হারমোনিয়াম, তবলা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের গান গাইছেন। বাঙালির ঘরোয়া আড্ডায় সাধারণত যেভাবে সঙ্গীত পরিবেশন হয়ে থাকে, সেভাবেই। ফলে যখন বোধ হয়নি, তখন থেকেই রবীন্দ্রনাথের গান কানে আসত। তবে ওই বয়সে গানগুলো একটু কঠিন লাগত। অর্থ বুঝতে অসুবিধা হত। একটা সময় বোরিংও লাগত, মনে হত — কেন শুনছে! তার থেকে বরং অন্তরা চৌধুরী, আদিত্য নারায়ণের বাচ্চাদের গানগুলো বেশি ভালো। বাংলা ব্যান্ডের গানগুলোও বেশ পছন্দ হত।
- আইপডে গান লোড করে শুনতাম
যখন ক্লাস নাইন টেনে উঠলাম, তখন সিলেবাসের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় শুরু হল। একদিকে যেমন রবীন্দ্রনাথ পড়তে শুরু করলাম, অন্যদিকে তাঁর গান শোনাও শুরু হল। ওই সময় ফোন, ইন্টারনেটের যুগ শুরু হচ্ছে। ফোনে মেমোরি কার্ড ভরে, আইপডে গান লোড করে শোনার চল ছিল তখন। আমারও তখন ওভাবেই গান লোড করে শোনা শুরু। বাংলা ব্যান্ডের গানের ভিড়েও রবীন্দ্রনাথ আবশ্যিক হয়ে উঠলেন।
- ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’
রবীন্দ্রনাথের গানের লিরিক্স যখন থেকে বুঝতে শুরু করেছি, তখন থেকেই তাঁকে চিনতে শুরু করা। খুব বোকা বোকা শোনাবে হয়তো, কিন্তু ওই বয়সে যখন কাউকে ভালো লাগছে, তখন হয়তো গেয়ে উঠছি— ‘আমার পরাণও যাহা চায়’! পছন্দের রবীন্দ্রসংগীত এমন অনেক আছে। আনন্দের গানের পাশাপাশি দুঃখের গানও সেই তালিকায়। আমার ‘সম্বিৎ’ শর্ট ফিল্মে ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ গানটা ব্যবহার করেছিলাম। তার দুটো কারণ ছিল অবশ্য। এক, ছোটবেলায় অরিজিনাল গান বানাতে জানতাম না। দুই, রবীন্দ্রনাথের গানের কোনও কপিরাইট ছিল না! তো, ওই গানটা বহুবার শুনেছি। ভীষণ পছন্দের একটা গান। আমার শর্ট ফিল্মের গল্পটাও ওই গানকে কেন্দ্র করেই লেখা। রবীন্দ্রনাথের লেখা উপন্যাসের কথাও এই প্রসঙ্গে বলি। ‘গোরা’ আমি অনেক বড় বয়সে এসে পড়েছি। রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসগুলির মধ্যে আমার অন্যতম প্রিয় চরিত্র গোরা। উপন্যাস জুড়ে তাঁর ভাবনার প্রতিফলন বেশ ভালো লেগেছিল। এছাড়া, ‘শেষের কবিতা’র অমিত আর লাবণ্য তো রয়েছেই।
- রবীন্দ্রনাথের কথা উঠলে মায়ের কথা বলতেই হবে
রবীন্দ্রনাথের কথা উঠলে আমার মায়ের কথা বলতেই হবে। রবীন্দ্রসংগীত শোনার অভ্যাসটা তাঁর জন্যই তৈরি হয়েছিল। মা সত্যি বলতে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রিসার্চ করে ফেলেছে। যে কোনও কবিতাই মা যে কোনও সময়ে গড়গড় করে বলে ফেলতে পারেন। আমার মনে আছে, অনেক ছোটবেলায় স্টেজে বীরপুরুষ কবিতাটা আবৃত্তি করেছিলাম। মা খুব ভালো আবৃত্তি করেন। মা-ই শিখিয়ে দিয়েছিলেন। মায়ের জীবনে যেহেতু গুরুদেবের এতটা প্রভাব ছিল, আমার মধ্যেও তার কিছুটা এসে পৌঁছেছে।

- রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিনটা
বাড়িতে রবীন্দ্রচর্চার আবহ রয়েছে বলে রবীন্দ্র জয়ন্তীর দিনটা আমাদের বাড়িতে একটু অন্যভাবে পালিত হয়। রবীন্দ্রনাথের একটা বড় ছবি আমাদের বাড়িতে আছে। সেটা ওই দিন বসবার ঘরে থাকে। তার সামনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাড়ির সকলে এমনকি ছোটরাও প্রণাম করি। সন্ধেবেলা সবাই কাজ থেকে ফিরলে গুরুদেবের গানে, কবিতায় সন্ধেটা কেটে যায়। বাড়ির সবাই মিলে গোল হয়ে বসে তাতে অংশ নেন।
- মায়ের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ
আমার ফ্যামিলি ভিডিয়োতে সাধারণত আমি চারটে ক্যারেকটার প্লে করি। লক্ষ করলে দেখা যাবে, আমার মায়ের চরিত্রটি মাঝে মাঝেই বলেন যে পৃথিবীতে এমন কোনও অনুভূতি নেই যা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কোনও গান লেখেননি। দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ, গরম, বৃষ্টি, শীত সবরকম সময়ের প্রায় সব আবেগই তাঁর গানে আর লেখায় ধরা দিয়েছে। ফলে আমার মায়ের চরিত্রটির সংলাপ যখন লিখতে বসি, তখন মায়ের মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথেরও কাছেও যেতে হয় আমাকে।
প্রবন্ধের বক্তব্য লেখকের নিজস্ব
(অনুলিখন - সংকেত ধর)