ডায়াবেটিক রোগীদের খুব ভেবে চিন্তে খাবার খেতꦬে হয়। নানান খাবারেই থাকে নিষেধাজ্ঞা। তবে এ কথাও ঠিক যে খাবারের মাধ্যমেও সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। লো-গ্লাইসেমিক খাবার বিরাট পরিবর্তন না আনলেও ডায়াবেটিক রোগীদের অল্প কিন্তু ভাল সুফল এনে দেয়। এমনই তথ্য জানানো হয়েছে দ্যা বিএমজে (The BMJ)-তে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে। এটি হচ্ছে দ্যা ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে এই লো-গ্লাইসেমিক ডায়েট বলতে কী বোঝানো হচ্ছে?
দ্য বিএমজে-তে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী,গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (Glycemic index or GI)হচ্ছে যে কোনও রেফারেন্স ফুড,ধরা যাক রুটি কিংবা গ্লুকোজের তুলনায় অন্য কোনও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার পরে ব্লাড সুগার লেভেল কতটা বাড়ছে সেটার মাপ। অন্য কথায় ব⭕লতে গেলে, গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হচ্ছে সেই ইনডেক্স যা কোনও কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়ার পর কত পরিমাণ ব্লাড সুগার লেভেল বাড়ছে সেটাকে তুলনা করে এমন কোনও খাবারের সঙ্গে যার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫৫ বা তার কম। এটাকে লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বলে ধরা হয়। কিছু লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার হল ব্রোকলি, লেটুস,বেগুন,ইত্যাদি। ফলের মধ্যে পেয়ারা, আপেল,স্ট্রবেরি,ব্লুবেরি,ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে তবে কম পরিমাণে। এছাড়াও দুধ,❀ দই,আমন্ড,চিনেবাদাম,মাছ,টার্কি,চিকেন খেতে পারেন ডায়াবেটিক রোগীরা। এই খাবারগুলো হচ্ছে লো-গ্লাইসেমিক খাবার।
সব সময় কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার 🔯খাওয়া হচ্ছে মানেই সেটা লো-গ্লাইসেমিক ডায়েট হবে এমনটা নয়। উদাহরণস্বরূপ তরমুজের 🍎কথা বলা যেতে পারে,এতে কম ক্যালোরি রয়েছে কিন্তু হাই-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স আছে।
এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য এটাই প্রথমবার নয়,এর আগেও লো-গ্লাইসেমিক ডায়েটের উপকারিতꦅা নিয়ে আলোচনা এবং চর্চা করা হয়েছে। এই রিপোর্টের গবেষকরা জানিয়েছেন যে ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা স্টাডি অফ ডায়াবিটিস ২০০৪ সালেই ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য গ্লাইসেমিক ইনডেক্স প্যাটার্নের উপর কাজ করেছিল।
দ্যা বিএমজে-তে যে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে যে গবেষকরা যুক্ত ছিলেন তাঁরা ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট ২৭টিrandomট্রায়াল সংগ্রহ করেছেন যেখানে দেখা গিয়েছে লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের প্রভাবগুলি। এই ট্রায়ালগুলোতে মোট ১৬১৭ জন ব্যক্তির উপর করা সমীক্ষার ডেটা ছিল যাঁদের টাইপ ১ অথবা টাইপ ২ ডায়াবিটিস ছিল। অধিকাংশ গবেষণাতেই পুরুষ মহিলার অনুপাত ছিল ৫০-৫০। যে ব্যক্তিদের তথ্য নেওয়া হয়েছিল তাঁদের অনেকেরই ওজন বেশি ছিল। এবং এঁরা প্রত্যেকেই মধ্যবয়সী ছিলেন,তবে বেশ কিছু ১১ বছরের কম বয়সী শিশুও ছিল। এঁদের প্রত্যেককেই ইনসুলিন নিতে হতো অথবা ওষুধ খেতে হতো ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। গবেষকরা গোটা ডেটাকে উচ্চ,মাঝারি,নিম্ন এভাবে সাজানোর জন্য গ্রেডিং সিস্টেমের সাহায্য নꦫিয়েছিলেন মোটামুটি প্রত্যেক সমীক্ষাতেই। এই সমীক্ষায় যে তথ্যগুলো ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো অধিকাংশই কানাডা (২১%), অস্ট্রেলিয়া(১৭%), ফ্রান্স(১০%),মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র(৭%), ইজরায়েল(৭%),মেক্সিকো(৭%) সহ অন্যান্য ইউরোপীয় এবং এশীয় দেশের তথ্য ছিল।
প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়েটের উপকারিতা কী?
সমস্ত ট্রায়াল থেকে যে ডেটাগুলো পাওয়া গিয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে যে লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়েট মেনে চলার ফলে হাই-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ডায়েটের তুলনায়HbA1c অনেকটাই কমেছে। একই সঙ্গে কমেছে শরীরের ওজন, ফাস💜্টিং গ্লুকোজ,এলডিএল কোলেস্টরল সহ সি রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন। তবে এই হ্রাস পাওয়ার পরিমাণগুলো বিরাট কিছু নয়,ছোটই তবে গুরুত্বপূর্ণ। এই রিপোর্টে ইনসুলিন লেভেল উন্নত হয়েছে কী না,কোমরের মাপ কমেছে কী না,ব্লাড প্রেসার কমেছে কী না সেসব বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে গবেষকরা রক্তচাপের তথ্যের যে একটা অভাব ছিল সমীক্ষায় সেটা জানিয়েছেন।
সব শেষে এই রিপোর্টের গবেষক তথা লেখকরা জানিয়েছেন যে সঠিক ডায়েট এবং লাইফস্টাইলের মাধ্যমে কিন্তু ডায়াবিটিস কন্ট্রোল করা যায়। পাশাপাশি লো-গ্লাইসেমিক ডায়েটের সাহায্যে যাঁরা টাইপ ২ ডায়াবিটিসের রোগী তাঁরা সহজেই গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। একই সঙ্গে এই ডায়েটের মাধ্যমে তাঁরা হাইপারগ্লাইসেমিয়া কমাতে পারবে ওষুধের ব্য🍎বহার কমিয়ে। লো-গ্লাইসেমিক খাবারকে সবসময় একটি নিরাপদ ডায়েট স্ট্র্যাটেজি মনে করা হয়, অল্প কিন্তু দারুন ভাবে গ্লাইসেমিক কন্ট্রোল করার জন্য মূলত HbA1cফাস্টিং গ্লুকোজ এবং কার্ডিওমেটাবলিক রিস্ক কমাতে এটা উপকারী।