প্রতিটি পরতে টানটান উত্তেজনা, তবে বুলেট ছাড়া— আপাতত পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে এটুকু বলা চলে! সরকারের পতন কিছুটা অবশ্যম্ভাবী ভেবে ইমরান খান আর ভোটাভুটিতে না গিয়ে সরাসরি নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিলেন পাকিস্তানকে। সেটা তথাকথিত গণতান্ত্রিক পাকিস্তানের জন্য ভালো না খারাপ, সময়ই বলবে। তবে বিরোধীরা হাত পা গুটিয়ে বসে আছে, এমনটাও কিন্তু নয়। বলাই যায়, সামনের ঈদের আগে পাক রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি ঠাউর করা খুব একটা সহজ কাজ হবে না।ইমরান খানের বিরোধীরা নিজেরা স্পিকার ঠিক করে ভোটাভুটি করেছেন অনাস্থা প্রস্তাব অনুযায়ী এবং সংখ্যার হিসেবে ১৯৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন যেখানে ১৭২ ম্যাজিক ফিগার ছিল। বিরোধীরা এই ভোটাভুটিকে আইন মাফিক বললেও সরকার পক্ষ বলছে এটি সম্পূর্ণ নিয়মবিরুদ্ধ এবং সুষ্ঠ গণতন্ত্রের পরিপন্থী নয়। পাক আমজনতার কাছে বিষয়টি খুব পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে ইমরান খান এবং তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফ কোনওভাবেই চায় না বিরোধীরা সরকার বানাক। তাই তড়িঘড়ি নির্বাচন ডাকার প্রক্রিয়া করেছে তারা। পুরো বিষয়টি তাই জটিলতর হয়ে পড়েছে এবং পাক সর্বসর্বা সেনাবাহিনীর কি ভূমিকা থাকতে চলেছে আগামী দিনে, সেই নিয়ে চিন্তিত রয়েছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সব দেশগুলো।একটু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে ইমরান খানের আসন টলমল করছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। রাশিয়া যেদিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক আগ্রাসনের পথে পা বাড়াল, সেদিন ইমরান খানের মস্কো ভ্রমণ কূটনীতির ভাষায় হারাকিরি ছিল। এদিকে নিজের দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের জন্য সরাসরি আমেরিকাকে দায় করা আরেকটি হটকারী সিদ্ধান্ত ছিল। আন্তর্জাতিক কূটনীতি অনুযায়ী তালিবানদের সঙ্গে আলোচনা বা আফগানিস্তান নিজেদের দখলে রাখার জন্য আমেরিকা এখন নির্ভর করছে পাকিস্তান নয়, বরং কাতারের উপর। সব মিলিয়ে ইমরান খান বেশ কিছুটা একলা হয়ে পড়েছিলেন। এদিকে করোনা সামলানোর ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে তার সরকার। অর্থনীতিক দিক থেকে পাকিস্তান দুর্বল জায়গায় এবং চিনের সাথে ঋণভিত্তিক নীতি যে সামনের দিনে বিপদ নিয়ে আসছে দেশের জন্য, এই নিয়েও প্রবল সমালোচিত হয়েছেন ইমরান খান।বর্তমানে অস্থায়ী তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল পাকিস্তানে। শাহবাজ শরিফ না বিলাবল জারদারি, পরিস্থিতি কার অনুকূলে থাকবে, এর আন্দাজ করা সহজ নয়। খেলোয়াড়ী জীবন থেকেই পাকিস্তানের অনেক কাছের জীবন্ত কিংবদন্তি ইমরান খান। তাই নির্বাচনে ইমরান খানের ফিরে আসা উড়িয়ে দেওয়া যায় না কোনওভাবেই। পাকিস্তানের ইতিহাসে কোন প্রধানমন্ত্রীই পাঁচ বছরের কোটা শেষ করতে পারেনি। তাই পাকিস্তানের কাছে আজ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল রাজনৈতিক স্থায়িত্ব, কিন্তু বর্তমানে তার থেকে অনেক মাইল দূরে রয়েছে ইমরান খানের সাধের পাকিস্তান।