সারাদেশের মতোই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে আজ পালিত হচ্ছে যুব দিবস, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকী। কিন্তু ইতিহাস বিস্তৃত আজকের এই সময় ভুলে গিয়েছে দেশের স্বাধীনতার কারিগরদের। তাই আজ উত্তর কলকাতার অলিতে-গলিতে বিবেকানন্দের স্মরণে বিভিন♔্ন অনুষ্ঠান পালিত হলেও মাস্টারদা সূর্যসেনের শহিদ দিবস উপেক্ষিত থেকে গিয়েছে বরাবরের মতই। আজ অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের দুই বীর বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার এবং সূর্য সেন শহিদ হন। অথচ আজ সূর্য সেনের নামাঙ্কিত সূর্যসেন স্ট্রিট হয়তো ভুলেছে বিপ্লবীদের সেই আত্মত্যাগ। আমহার্স্ট্র স্ট্রিটের মোড় থেকে সূর্য সেন স্ট্রিট ঢোকার মুখে অবশ্য সূর্য সেনের আবক্ষ মূর্তিটিতে বিভিন্ন গণসংগঠন এবং ক্লাবের উদ্যোগে মাল্যদান হয়েছে সকাল সকাল।
কিন্তু কোথাও যেন দায়সারা ভাবে। আমরা ধরে রাখতে পারিনি বিপ্লবীদের সেই ঐতিহ্য, ইতিহাস। কেন আমরা ভুলে গেলাম সূর্য সেনের মত বীর বিপ্লবীদের, এর উত্তরে এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা নৃপেনবাবু জানাচ্ছেন, ‘আজকের সময়ে এই বিপ্লবীদের আত্মহত্যা ভুলিয়ে দিতে চাওয়া হচ্ছে। ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন-এর মত বিপ্লবীদের ভুলিয়ে দেওয়ার একটা চক্রান্ত চলছে দেশজুড়ে। ওরা কেউ স্বাধীনতা আনেনি, স্বাধীনতা এনেছি যেন আমরা।’ এম🐼নই তাচ্ছিল্য তার চোখেমুখে৷ ইতিহাস বদলে দেওয়ার অভিযোগও আনলেন তিনি। প্রবীণ এই নাগরিক চিন্তিত পরবর্তী প্রজন্ম আদৌ সত্যি ঘটনা, ইতিহাসগুলো জানবে কিনা, সেই নিয়েই।
কথা প্রসঙ্গেই এল, রাস্তার ওপারের ফেভারিট কেবিনের কথা। উত্তর কলকাতার অফিস ফেরত কর্মচারি থেকে ছাত্রছাত্রী কিংবা পাড়ার বাসিন্দাদের আড্ডার অন্যতম ঠিকানা ছিল সূর্য সেন ﷽স্ট্রিটের ওপর এই ফেভারিট কেবিনই। বর্তমানে পারিবারিক কারণে কেবিনটি বন্ধ থাকলেও আজও স্মৃতিতে উজ্জ্বল ১০০ বছরের ইতিহাস পেরিয়ে আসা চায়ের দোকানটি। ১৯১৮ সালে বরুয়ারা এই ফেভারিট কেবিন শুরু করেন। স্বাধীনতার আগে থেকেই চা এবং জলখাবার খেতে বহু বিপ্লব আসতে এই ফেভারিট কেবিনেই। প্রেসিডেন্সিতে পড়ার সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র যেমন নিয়মিত আসতেন সেখানে, তেমনই নজরুল ইসলাম বহুবার এখানে গান-কবিতার আসর বসিয়েছেন।
শোনা যায় মাস্টারদা সূর্য সেন বেশ কয়েকবার এখানে এসেছেন। কোনও গল্প কথা নয়, আজ স্মৃতি আবছা হলেও এসব ঘটনা এলাকায় ঘুরলেই শোনা যাবে মানুষের মুখে মুখে৷ ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে পেছনের রাস্তা দিয়ে ফেভারিট কেবিন ছেড়ে বেরিয়েও যেতেন বিপ্লবীরা। সেই উত্তাল সময়ে ফেভারিট কেবিনের কর্মচারিরা ব্রিটিশ কিংবা গুপ্তচরদের আসতে দেখলেই চায়ের প্লেট বাজাতেন চামচ দিয়ে। আর সেই সংকেত শুনেই গা ঢাকা দিতেন সূর্য সেনরা। আজ সেই সূর্য সেন স্ট্রিট কলেজ স্ট্রিট ভুলে গেল কি বিপ্লবীদের লড়াই, মতাদর্শ? যে ভারতবর্ষে গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শহীদ হয়েছিলেন মাস্টারদারা, তেমন দেশ কি গড়তে পারলাম আমরা? এ সকল প্রশ্নের মাঝেই দিন নিভে অন্ধকার হয়ে আসে৷ শীতের গোধূলিবেলায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেটের সামনে একটা মাঝারি মাপের শহীদ বেদীতে সূর্য সেনের মুখ জ্বলজ্বল করে। কিন্তু তার উত্তরাধিকার, মতাদর্শ কো𝔉থায়? এর উত্তর মেলে না।