ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। কথাটা যে কতটা সত্য তা প্রমাণ করে দেখালেন ২১ বছরের যুবতী। সরকার যা করতে ব্যর্থ হয়েছে তা তিনি করে দেখিয়েছেন। কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। তার উপর তিনি কোনও স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের কর্মীও নন। তার পরও পারলেন। প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরেই। মুসলিম অধꦬ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামকে সম্পূর্ণ টিকাকরণ করালেন প্রবল বাধা–বিপত্তির মধ্য দিয়ে। শুধু প্রত্যন্ত গ্রাম বললে ভুল হবে। একদিকে প্রত্যন্ত অন্যদিকে গণ্ডগ্রাম। আর সেখানেই মাত্র দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করা আরফা খাতুন করে দেখালেন অসাধ্য সাধন।
ঠিক কী করেছেন আরফা? স্থানীয় সূত্রে খবর, আরফা একজন শ্রমিকের মেয়ে। গত ২৫ দিন ধরে তিনি গ্রামের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে টিকা বা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য সচেতন করে তোলেন। অনেকেই মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল এই প্রস্তাবে। কিন্তু সবাইকে বোঝাতে তিনি সক্ষম হয়েছেন এবং ওই গ্রামের দু’হাজারের বেশি মানুষকে টিকা নেওয়ায় সফল হয়েছেন। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই ছিল ভুল ধারণা। সেটা ভেঙে এই কাজ করাটা শুধু কঠিন নয়, একপ্রকার অ⛄সম্ভবই ছিল। যদি এখন গ্রামের সবাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন। আর এই কাজ করতে পেরে খুশি গ্রামের মেয়ে আরফা।
কিভাবে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হল? আরফা পুর্ণཧিয়ার অন্তর্গত গুরিয়াল গ্রামের বাসিন্দা। এই গ্রামটি সম্পূর্ণ মুসলিম অধ্যুষিত। এই গ্রামের মেয়ে আরফা খবরের কাগজ পড়ে, টেলিভিশন দেখে। সেখান থেকে শুনেই তিনি বুঝতে পারেন টিকা নেওয়াটা কতটা জরুরি এই মহামারীর সময়ে। এই বিষয়ে আরফা বলেন, ‘আমি খুব ধাক্কা পেয়েছিলাম যখন শুনলাম গ্রামে টিকা দেওয়ার প্রতিনিধিদল এসে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তখনই আমি চ্যালেঞ্জটা নিলাম। আমি সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উܫঠি। তাই স্নান ও প্রাতঃরাশ করেই গ্রামের দরজায় দরজায় গিয়ে কড়া নাড়তে শুরু করলাম। বহু বাধা এলেও আমি পিছপা হয়নি।’
এই গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ পরিযায়ী শ্রমিক এবং ভাগ চাষী। এখানে একটামাত্র সরকারি স্কুল আছে। আরফার কথায়, ‘প্রথমে আমি স্কু𓂃ল দিয়েই কাজ শুরু করার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু সেই স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় তা হয়নি। এখানের গ্রামের মানুষদের বোঝানো বেশ কঠিন হয়ে উঠছিল। কিন্তু আমি ভাগ্যবতী যে তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু আমার ২৫ দিনের শ্রম বৃথা যায়নি। সবাই টিকা নিয়েছেন। এখন দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমি তাতেই খুশি।’ পুর্ণিয়া জেলার জেলাশাসকের মাধ্যমে গোটা গ্রাম টিকাদান করিয়ে নেন তিনি।