ক্ষোভে ফুঁসছে পরিবার। হায়দরাবাদের মতো এনকাউন্টার করে মেয়ের খুনিদের মেরে ফেলার আর্জি জানালেন উন্নাওয়ের নিগৃহীতার বাবা। এবার বোনের বোনের হত্যাকারীদের মৃত্যুর দাবি জানালেন দাদা।গত বছর ডিসেম্বরে শুভম ও শিভম ত্রিবেদী নামে দুই যুবকের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ করে ওই তরুণী। পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি জামিন পায় এক যুবক। অন্যজন পুলিশের খাতায় পলাতক ছিলেন।নিজের বয়ানে বছর ২৪-র ওই তরুণী জানান, মামলার শুনানিতে যাওয়ার পথে গৌরা ক্রসিংয়ের কাছে তাঁর পথ আটকায় দুই অভিযুক্ত শুভম ও শিভম ত্রিবেদী-সহ আরও পাঁচজন। বাকি তিনজন তথা হরিশংকর ত্রিবেদী, উমেশ বাজপাই ও রামকিশোর ত্রিবেদীকে চিনতেন না বলে জানান তরুণী। তারা মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। তাতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।পরে তাঁকে উদ্ধার করে লখনউয়ের একটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল তরুণীর। রাতে তাঁকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গ্রিন করিডরের সাহায্যে তাঁকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই গতরাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। আজ সকালে ময়নাতদন্তের পর দেহ সড়কপথে তরুণীর গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।উন্নাওতে বাড়িতে তরুণীর বাবা বলেন, "অভিযুক্তদের তাড়া করে গুলি করে মেরে ফেলা হোক। আমি কোনওরকম সাহায্য বা টাকা চাই না। আমি শুধু দেখতে চাই, হায়দরাবাদের মতো ওদের গুলি করে মেরে ফেলা হোক বা ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।" তরুণীর ভাইও অভিযুক্তদের মেরে ফেলার দাবি তুলেছেন।তিনি বলেন, "দিদি যেখানে গেছে সেখানেই অভিযুক্তদের পাঠানো হলে তবেই ন্যায়বিচার পাবে তাঁর দিদি ও পরিবার।" পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, এখনও তাঁদের লাগাতার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। অথচ পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করছে না।এদিকে, ঘটনার প্রতিবাদে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদব বিধানসভার বাইরে ধরনায় বসেন। তিনি বলেন, "একেবারে নিন্দনীয় ঘটনা। এটা কালো দিন। বিজেপি সরকারের আমলে এটা প্রথম ঘটনা নয়। এই বিধানসভাতেই দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, অপরাধীদের এনকাউন্টার করা হবে। তাঁরা একটি মেয়ের জীবন বাঁচাতে পারলেন না। মুখ্যমন্ত্রী (যোগী আদিত্যনাথ), স্বরাষ্ট্র সচিব ও ডিজিপি ইস্তফা না দিলে ন্যায়বিচার মিলবে না।" সমাজবাদী পার্টির পাশাপাশি সরব হয়েছে অন্য বিরোধী দলগুলিও। তরুণীকর নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়নি কেন তা রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। টুইটারে তিনি লেখেন, "পুরোনো ঘটনার কথা মাথায় রেখে কেন তরুণীকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি ? যে পুলিশ অফিসার এফআইআর করতে চাননি, তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর অত্যাচার নিত্যদিনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সরকার কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?" পরে উন্নাওতে তরুণীর বাড়িতে যান তিনি।দেখা করেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।চাপের মুখ খুলেছেন যোগীও। তরুণীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন তিনি। ঘটনাটিকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, "সব অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দ্রুত (তদন্ত) চলবে। দোষীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।"