অরুণ কুমারজাতির ভিত্তিতে দেশে জনগণনার দাবিতে বুধবার ফের সরব হলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তিনি বলেন, ‘জাতির ভিত্তিতে জনগণনা করার জন্য আমি বহু দিন ধরে বলে আসছি। এতে বিভিন্ন বর্ণ বা জাতির জনসংখ্যা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেবে। যা তাঁদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প পরিকল্পনা করতে কাজে আসবে।’তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে বিহার বিধানসভায় এ বিষয়ে দুটি প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে। দুটি প্রস্তাবই পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রকে। পার্টি অফিসে সাংবাদিকদের নীতিশ কুমার বলেন, ‘অন্তত একবার জাতির ভিত্তিতে দেশে জনগণনা করা উচিত। তা হলে সামগ্রিক ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর আগে এমন জনগণনা করা হয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তা আর করা হয়নি। সে কারণেই এখন জাতির ভিত্তিতে দেশে জনগণনা হওয়াটা খুব জরুরি।’নীতিশ কুমারের কথায়, ‘বিহারে কারপুরি ঠাকুরের সরকার থাকাকালীনই এ রাজ্যে অনগ্রসর শ্রেণি এবং তফসিলি জাতিগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের মতে, জনগণকে আরও বেশি করে উপকৃত করার জন্য কেন্দ্রের জাতিভিত্তিক জনগণনা করা উচিত। এই মুহূর্তে কেন্দ্রে একটিই বিভাগ রয়েছে।’ সরকারি ক্ষেত্রে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিতে (ওবিসি) সংরক্ষণের জন্য বিচারপতি রোহিনী কমিশন প্রস্তাব দেওয়ার পরপরই নীতিশ কুমারের এমন মন্তব্য অনেকটাই তাৎপর্যপূর্ণ।অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত (ওবিসি) জনগণের ২৭ শতাংশকে পৃথক একটি বিভাগে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে রোহিনী কমিশন। প্রকৃত দুঃস্থ মানুষ যাতে সংরক্ষণ এবং ওবিসি হওয়ার সুবিধা সমানভাবে পায় তার জন্যই এমন প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ওবিসিদের মধ্যে উপ শ্রেণিবদ্ধকরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ২০১৭ সালে এই কমিশনটি গঠিত হয়। বেশ কয়েকবার সম্প্রসারণের পর চলতি মাসের গোড়ার দিকে এই কমিশন তার রিপোর্টে পেশ করেছে। তাতে কেন্দ্রীয় তালিকায় ২৬৩৩টি ওবিসি জাতকে ভাগ করে চারটি উপ বিভাগে ২, ৬, ৯ ও ১০ শতাংশ করে মোট ২৭ শতাংশ জনগণকে রাখা হয়েছে।যদিও বিভিন্ন জাতির প্রকৃত জনসংখ্যার ব্যাপারে কোনও সরকারি তথ্য এই মুহূর্তে নেই। ১৯৩১ সালে শেষ করা জাতিভিত্তিক জনগণনার ওপর নির্ভর করে, সেই অনুমানেই বর্তমান রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। এর জন্য প্রায়শই দাবি উঠেছে এবং কিছু উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল, তবে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি।১৯৩১ সালে শুধুমাত্র হিন্দু জাতিগুলির ভিত্তিতে জনগণনা করা হয়। এবং সমস্ত ধর্মের জাতি সম্বলিত জনসংখ্যা রিপোর্ট সামনে আসে ১৯৬১ সালে। তাতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের সর্বমোট জনসংখ্যার ৫১.৩ শতাংশ জনগণই অনগ্রসর শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী গত ২০১১ সালে বিহারে সোশ্যাল ইকোনমিক অ্যান্ড কাস্ট সেনসস্–এর (SECC 2011) আয়োজন করে রাজ্য গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ। যদিও, পাছে অসামঞ্জস্য সামনে আসতে পারে সেই কথা ভেবে জাতিভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি। এখনও অবধি আদমশুমারি কেবল ধর্ম এবং এসসি বা এসটি জনসংখ্যার গণনা করে।২০১৯ সালে বিহার বিধানসভা দুটি সরকারি প্রস্তাব পাশ করে। প্রথমটি ২০২১ সালে জাতিভিত্তিক আদমশুমারীর পক্ষে। এবং অন্যটি পুরনো ২০০ পয়েন্টের রোস্টার সিস্টেম মেনে চলার পক্ষে। এই ২০০ পয়েন্টের রোস্টার ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি ইউনিট হিসেবে দেখা হয়। এটি ১৩ পয়েন্ট রোস্টার ব্যবস্থার মতো নয় যা এক–একটি বিভাগকে একটি ইউনিট হিসেবে দেখে।২০২০ সালে ঠিক নির্বাচনের আগে বিহার বিধানসভা আরও দুটি প্রস্তাব পাশ করে। রাজ্যে চালু হওয়া বিতর্কিত এনআরসি–র মহড়ার বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এবং ২০২১ সালে জাতির ভিত্তিতে দেশে জনগণনা করানোর জন্য আর একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।