শিশির গুপ্তলক্ষ্য একটাই। কিন্তু তখতের ব্যক্তি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই সীমান্ত নিয়ে অবস্থান পালটে যায়। আর সেই শাসকের নির্দেশ মতোই চলে চিনা সেনা। বর্তমান চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অবশ্য 'সবুজ লাইন'-এর ভিত্তিতে চিনের মানচিত্র সম্প্রসারিত করতে চান। মাও জে দঙের নেতৃত্বে যে মানচিত্র ১৯৫৯ সালে ছড়িয়েছিলেন চিনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই।১৯৫৬ সালে আকসাই চিনের মধ্যে দিয়ে লাহসা-কাশগর হাইওয়ে (নম্বর ২১৯) তৈরি করে সীমান্ত সংক্রান্ত তথ্য পালটাতে চেয়েছিলেন মাও জে দং। তার চার বছর পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে সীমান্ত সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন লাই। সেক্ষেত্রে চিনা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছিল, 'যেখানে যেমন আছে, সেই নীতি অনুযায়ী' বিষয়টির সমাধান করা হোক। অর্থাৎ অরুণাচল প্রদেশে ভারতের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নিচ্ছিল চিন এবং হাজি লাঙ্গর পাসের দক্ষিণে আকসাই চিনের উপর বেজিংয়ের দখল মেনে নিতে হত নয়াদিল্লিকে। কিন্তু তা একেবারেই মেনে নেয়নি ভারত। যা দু'বছর পরে অর্থাৎ ১৯৬২ সালে চিনা আগ্রাসনের অন্যতম মূল কারণ।তারপর ১৯৭৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন চিনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শাসক দেং জিওয়াংপিং। সীমান্ত সমস্যা মেটানোর জন্য একটি প্যাকেজের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। দেং প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পূর্ব সেক্টরে ভারতের দাবির সঙ্গে একমত হতে রাজি বেজিং। পরিবর্তে পশ্চিম সেক্টরে ভারতকেও একই কাজ করতে হবে। সেজন্য কী কী ছাড়তে হবে, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু প্রকাশ করা না হলেও দেং জানিয়েছিলেন, সীমান্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখলে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত সীমান্ত সমাধানের বিষয়টি তুলে রাখা যেতে পারে। পরে ১৯৮৫ সালে একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন দেং। কিন্তু পরের বছর উত্তর অরুণাচল প্রদেশে সোমদোরং চু ঘটনার পর চিনের অবস্থান আবার ব্যাপকভাবে পালটে যায়। ১৯৮৭ সালে নয়াদিল্লিতে ভারতের বিদেশসচিব (পূর্ব) এ পি ভেঙ্কটেশ্বরনের কাছে চিনা উপ-বিদেশমন্ত্রী লিউ শুকুইন দাবি করেছিলেন, সীমান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য পূর্ব ও পশ্চিম - উভয় সেক্টরেই একমত হতে হবে। সেই সময় চিনের নেতা এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন দেং। তারপর থেকে ৩,৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখতে অসংখ্য চুক্তি ও প্রোটোকল সই করা হয়েছে।২০০৫ সালে বিশেষ প্রতিনিধি আলোচনার পর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং চিনের প্রতিনিধির মধ্যে ২২ টি বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সীমান্ত সমস্যা মিটে যাওয়ার পথে একচুলও অগ্রসর হয়নি। বেজিং এখনও অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বত হিসেবে উল্লেখ করে এবং লাদাখে ভারতীয় সীমান্তকে আকসাই চিন বলে।সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বর্তমানে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে ভারতীয় সেনা এবং পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) মধ্যে সংঘাতের জেরে কমপক্ষে পশ্চিম সেক্টরে এক অপরের মানচিত্র বিনিময় হতে পারে। তার ফলে দু'দেশ একে অপরের অবস্থান জানতে পারবেন। কিন্তু তা কতটা বাস্তবে হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশেষত ডেসপ্যাং থেকে প্যাংগং সো লেক পর্যন্ত যেভাবে চিন ইচ্ছাকৃত আগ্রাসন দেখাচ্ছে, তা শান্তির পক্ষে একেবারেই সহায়ক নয় বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।