পূর্ব লাদাখে ঢুকে পড়েছে চিনা সেনাবাহিনীর একাংশ এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারত। মঙ্গলবার সংবাদসংস্থা CNN-News 18 কে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এ দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী ৬ জুন চিন ও ভারতের সেনাবাহিনীর শীর্ষ আধিকারিকরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসতে চলেছেন। তবে নিজের অবস্থান থেকে কোনও মতেই সরবে না ভারত, জানিয়েছেন মন্ত্রী।পূর্ব লাদাখের সংবেদনশীল অঞ্চল নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধ সম্পর্কে রাজনাথের দাবি, ওই এলাকা নিজেদের বলে দাবি করেছে চিন, যা ভারতের মতে ভারতীয় ভূখণ্ডের অংশ।প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘বেশ কিছু সংখ্যক চিনা নাগরিক ওই এলাকায় ঢুকে পড়েছেন। ভারতের যা করা উচিত ছিল, তা-ই করেছে।’প্রসঙ্গত, ভারত ও চিনের মধ্যবর্তী আন্তর্জাতিক সীমান্তের আসল নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখণ্ডে (LAC) চিনা অনুপ্রবেশ নিয়ে এই প্রথম সরকারি তরফে কোনও বিবৃতি প্রকাশ করা হল। সূত্রে খবর, লাদাখের গলওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং ৎসো সরোবরের তীরে যথেষ্ট পরিমাণে চিনা সৈন্য প্রবেশ করে শিবির গড়ে রয়েছে। এ দিন রাজনাথ বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য পরিস্থিতি নিয়ে চিনের গভীর বিবেচনা করা প্রয়োজন। গত প্রায় একমাস যাবত ভারতীয় ও চিনা সেনাবাহিনী পূর্ব লাদাখের পার্বত্য অঞ্চলে LAC বরাবর সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে। দুই তরফেই একাধিক বার সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে এই নিয়ে আলোচনা হলেও সমাধান মেলেনি।উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ডোকলামে ত্রিদেশীয় সীমান্তে এমনই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী। তবে সেই বিতর্কের অবসান হয়েছিল কূটনৈতিক ও সামরিক আলোচনার মাধ্যমে, জানিয়েছেন রাজনাথ। এবারও সেই পথেই শান্তি ফিরতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তবে তিনি জানাতে ভোলেননি যে, ‘ভারত কোনও দেশের অহঙ্কারে আঘাত করতে চায় না, আবার একই সঙ্গে নিজের গর্ব খর্ব করার কোনও প্রচেষ্টাকেও প্রশ্রয় দেয় না।’এবারের বিতর্কের সূত্রপাত প্যাংগং ৎসো সরোবর ঘিরে নতুন সড়ক এবং গলওয়ান উপত্যকার ওপর দিয়ে দরবাক-শায়ক-দৌলত বেগ প্রাচীন সড়কের পুনর্নির্মাণে ভারত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প কেন্দ্র করে। এই দুই সড়ক নির্মাণের বিরুদ্ধেই তীব্র আপত্তি জানায় বেজিং। আবার চিনও একটি ফিংগার রোড তৈরিতে হাত দিয়েছে, যা ভারত অনুমোদন করছে না। দুই পক্ষের সংঘাতের জেরে পূর্ব লাদাখে শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশে অতিরিক্ত বাহিনী, সামরিক যান ও প্রচুর অস্ত্র সম্ভার পাঠিয়েছে ভারতীয় সেনা। পালটা হিসেবে চিনও তার সেনা অবস্থান জোরদার করতে অনুরূপ পদক্ষেপ করেছে। এরই মাঝে গত ৫ মে সন্ধ্যায় প্রায় ২৫০ ভারত ও চিনা সৈন্য সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পরে লাদাখ পরিস্থিতি জটিলতর হয়ে দাঁড়ায়। পরের দিনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি এবং বর্তমানেও ওই অঞ্চল উত্তপ্তই রয়েছে। এর পরে গত ৯ মে উত্তর সিকিমেও একই ঘটনা ঘটে। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্পর্ক যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে যুদ্ধের আশঙ্কা তীব্রতর হচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।