প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেনা প্রত্যাহার ও উত্তেজনা হ্রাসে পাঁচটি বিষয়ে একমত হল ভারত ও চিন। মস্কোয় দুই বিদেশমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের পরে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রবৃহস্পতিবার শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন সম্মেলনের ফাঁকে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়্যাং ইয়ির সঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরের প্রায় আড়াই ঘণ্টা ব্যাপী আলোচনা হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গুরুত্বের কথা মাথায় রেখেই দুই দেশের মন্ত্রীর মধ্যে কথা হয় বলেও জানিয়েছে চিন। বৈঠকে সীমান্তে অযথা অতিরিক্ত চিনা সেনা সমাগম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জয়শংকর।বৈঠকের পরে যুগ্ম বিবৃতিতে ভারত ও চিন সরকারের তরফে ঐক্যমতে পৌঁছানোর বিষয়ে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এযাবৎ দুই দেশের নেতাদের চেষ্টায় গড়ে ওঠা দ্বিপাক্ষিক সম্প্রীতি নষ্ট হয়, এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে দুই তরফই। বিশেষত সতর্ক থাকা হবে, মতান্তর যেন কোনও মতেই চূড়ান্ত পর্যায়ে না পৌঁছয়। দুই বিদেশমন্ত্রীই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সীমান্ত সমস্যা কোনও পক্ষের কাছেই লাভজনক নয় এবং সেই কারণেই চিন ও ভারতের সামরিক পর্যায়ে বৈঠকের ভিত্তিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ সরানোর প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করা হবে। সেই সঙ্গে দুই পজক্ষের সেনা ঘাঁটির মাঝে ব্যবধান বাড়িয়ে উত্তেজনায় লাগাম দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে বৈঠকে।লাদাখ সেক্টরে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত সংঘাতের আবহেই মস্কোয় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন জয়শংকর ও ওয়্যাং। তবে তার আগে গতকাল আরও দুই বার তাঁদের সাক্ষাৎ হয়- প্রথমে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে এবং দ্বিতীয় বার রাশিয়া-ভারত-চিন (আরআইসি) আলোচনায়। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখণ্ডে চিনা সেনাবাহিনীর প্রবেশ এবং প্যাংগং সরোবরের দক্ষিণ তীরে তাদের অবস্থান কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দেয়। গত ২৯-৩০ অগস্ট চিনা সেনার গতিবিধি প্ররোচনামূলক ছিল বলেও দাবি ভারতীয় সেনাবাহিনীর। তার পরে গত ৭ সেপ্টেম্বর চিনা সেনা ভারতের সামরিক ঘাঁটি দখলের চেষ্টা করলে বাধা পেয়ে শূন্যে গুলি চালায় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। ১৯৭৫ সালের পরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেই প্রথম গুলি চলল। এই ঘটনার পর থেকে দুই পক্ষই তাদের সামরিক অবস্থান আরও মজবুত করায় মনোযোগী হয়েছে। প্যাংগং সরোবর অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা সমাগম ও সেই সঙ্গে ট্যাঙ্ক-সহ সামরিক সরঞ্জামের সমাবেশ ঘটানো হয়েছে দুই তরফেই। চিনের জমি দখলের দুরভিসন্ধি রুখে দিতে ভারতীয় সেনার তৎপরতা আপাতত কাজে দিয়েছে।