প্যাংগং ৎসো সরোবর ও গোগরা-হট স্প্রিংস অঞ্চলে সীমালঙ্ঘনকারী চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করার জেরে কুগরাং নদী সংলগ্ন গিরিশিরা এলাকায় নিজেদের অবস্থানে অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় যতক্ষণ পর্যন্ত না চিন পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরছে, তত দিন পর্যন্ত এই অবস্থান বজায় রাখা হবে বলে ঠিক করেছে সেনা।লাদাখ ও অধিকৃত আসাই চিন অঞ্চলে পিএলএ-র বায়ুসেনার টহলদারি অনেকাংশে হ্রাস পেলেও ১,৫৯৭ কিমি বিস্তৃত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে লাদাখে ঘাঁটি গেড়ে বসা চিনা ফৌজ পিছু হঠার কোনও সদিচ্ছা প্রকাশ করেনি। সেনার তরফে এক শীর্ষস্থানীয় কম্যান্ডার জানিয়েছেন, ‘দুই অঞ্চলেই সীমা লঙ্ঘনকে কার্যত অনুপ্রবেশে রূপান্তর করার চিনা প্রয়াস দেখার পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নিজেদের আগুয়ান অবস্থান পূর্ণ মাত্রায় বহাল রাখতে।’জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা সহজেই বুঝতে পেরেছেন যে, গত মে মাসে তিব্বত ও শিনজিয়াং মিলিটারি ডিস্ট্রিক্ট-এর মধ্যে দিয়ে চিনের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কম্যান্ড অঞ্চলের বাইরে থেকে বাহিনী পাঠিয়ে লাদাখে পিএলএ-র ঘাঁটি গেড়ে বসার পিছনে সে দেশের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) সাধারণ সম্পাদক শি জিনপিংয়ের অনুমোদন অবশ্যই রয়েছে। চিনের ক্রমাগত অনুপ্রবেশ রুখতে ১৯৮৪ সালে সিয়াচেন হিমবাহ ও সালতোর অঞ্চলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশে অপারেশন মেঘদূত-এ নেওয়া পন্থাই অনুসরণ করছে ভারতীয় সেনা। এক ভারতীয় কূটনীতিক যেমন বলেছেন, ‘পর্বতশৃঙ্গে দীর্ঘকালীন সামরিক অবস্থানের অভ্যাস ১৯৮৪ সাল থেকেই আমাদের রয়েছে। ৩৬ বছর পরেও পাকিস্তানি হামলা ঠেকাতে সিয়াচেনের সমস্ত অনুপ্রবেশকারী পথে কড়া নজরদারি বহাল রয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অঞ্চলে কোনও একতরফা পরিবর্তন ভারতীয় সেনা মেনে নেয় না।’ চিনা কূটনৈতিক মহল মুখে শান্তি ও অহিংসার বুলি আওড়ালেও তার প্রতিনিধিরা ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বার বার অদ্ভূত নানান দাবি জানাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে প্যাংগং ৎসো সরোবর থেকে সেনার এক পুরনো প্রশাসনিক ঘাঁটি সরানো এবং কুগরাং গিরিশিরা থেকে ভারতের সামরিক ঘাঁটি উৎখাত করার মতো অবাস্তব দাবি। অন্য দিকে, একাধিক বৈঠকের পরেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে লাদাখে অনুপ্রবেশকে বৈধতার রূপ দিতে গলা চড়াচ্ছে বেজিং। স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রকারান্তরে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, নিয়ন্ত্রণরেখা বার বার অতিক্রম করার পাকিস্তানি প্রচেষ্টা এবং লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ রোধ করতে প্রস্তুত রয়েছে ভারত। এই ভাষণের মারফত দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে কড়া বার্তা দিয়েছেন নমো। দুই ক্ষেত্রেই সীমান্ত বিবাদের জেরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উল্লেখজনক অবনতি ঘটেছে।ভারতের সঙ্গে প্রভূত লাভদায়ী ৮০,০০০ কোটি ডলার মূল্যের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও শি জিনপিংয়ের সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, কোনটি বেশি লোভনীয়, তা বেছে নিতে হবে বেজিংকেই। এমনই মনে করছে ভারতীয় কূটনৈতিক মহল।