একটি ছোট্ট শব্দ মা। মা শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে মায়া, মমতা, অকৃত্রিম স্নেহ, আদর, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। মায়ের মতো এত মিষ্টি শব্দ দ্বিতীয়টি আর হয় না। সেই মায়ের স্নেহ ভালোবাসা থেকে ৪২ বছর দূরে ছিলেন চিলির থাইডেন নামের এক ব্যক্তি। জন্মের পরই চুরি করা হয় তাকে এবং নিজের মায়ের থেকে দূরে যুক্তরাষ্ট্রে একটি পরিবারে তিনি বড় হতে থাকেন। আজ প্রায় ৪২ বছর পর, তিনি প্রথমবারের মতো তার নিজের মায়ের সাক্ষাৎ পান। তথ্যসূত্র থেকে জানা গেছে যে, প্রায় ৪২ বছর আগে, হাসপাতালের কর্মচারীরা জন্মের পরপরই মারিয়া অ্যাঞ্জেলিকা গঞ্জালেজের ছেলেকে তার কাছ থেকে তুলে নেয় এবং পাচার করে দেয় অন্যত্র। পরে মারিয়াকে জানানো হয় যে, তার বাচ্ছাটি মারা গেছে। আজ প্রায় চার দশক পর চিলির ভালদিভিয়াতে পুনরায় মিলিত হন মা ও ছেলে।প্রথম বার মাকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন থাইডেন। মাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি মা। থাইডেনের মা মারিয়া অ্যাঞ্জেলিকাও নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে কান্নার মাঝেই জড়িয়ে ধরেন ছেলেকে। থাইডেনের মা সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, 'যখন আমার শিশুর বয়স আট দিন, তখন আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল আমার ছেলেকে'।চিলির নস বুসকামোস নামক একটি সংস্থার সহায়তায় থাইডেন তার মাকে খুঁজে পেয়েছেন। এই সংস্থাটি আবিষ্কার করে যে, থাইডেন চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর একটি হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন্মের পর থাইডেনকে একটি ইনকিউবেটরে রাখা হয় ও তার মাকে কিছুদিন পর এসে তার শিশুকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। কিছুদিন পর যখন তিনি তার সন্তানকে নিতে আসেন, তখন তাকে বলা হয় যে তার সন্তান মারা গেছে।চিলির পুলিশের তদন্ত থেকে জানা গেছে যে ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে চিলির বেশ কিছু পরিবার থেকে কয়েক হাজার শিশুকে পাচার করা হয়েছিল। আসলে শিশুগুলিকে চুরি করা হয়েছিল দরিদ্র পরিবারগুলি থেকে। সেই সময় চিলির সেই অসহায় মায়েরা জানত না, কীভাবে নিজেদের শিশুদের রক্ষা করতে হয়।থাইডেনের ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গেছে যে তিনি চিলির নাগরিক। থাইডেন সম্পূর্ণ বিষয়টি পরিষ্কার হলে তিনি, স্ত্রী জোহানা এবং তাদের দুই কন্যা সন্তানের সাথে উড়ে যান চিলিতে এবং দেখা করেন তার মায়ের সাথে। থাইডেনর মা এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৪২টি রঙিন বেলুন দিয়ে অভ্যর্থনা জানান নিজের ছেলেকে। বেলুনগুলির প্রতিটি নির্দেশ করে তার পরিবারের সাথে হারিয়ে যাওয়া এক একটি বছরকে।