লকডাউনের প্রথম দিন ঢাকায় বেশ কঠোরভাবে পালিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। তবে এরমধ্যেই করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১৪৩ জন।আর এই কঠোর লকডাউনের মধ্যেও কিছু মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে পড়লে তারা শাস্তিরও মুখোমুখি হয়েছেন।অবশ্য ঢাকার বাইরের অনেক জায়গায় কঠোর লকডাউন দেখা যায়নি। ঢাক-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে বেশ কিছু দূরপাল্লার বাস চলতে দেখা যায়। পুলিশ জরিমানা ও আটক করার পর বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর ভৈরবে লকডাউনের মধ্যেও সাপ্তাহিক হাট বসার খবর পাওয়া গেছে।ঢাকার বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকেই পুলিশ ও র্যাব চেকপোস্ট বসায়। সেনা সদস্যরাও সড়কের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নেন। ফেরিঘাট গুলোতেও সেনা সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। আর ছিলো ভ্রাম্যমাণ আদালত। জানা গেছে এই টহল ও অবস্থান রাতেও কার্যকর থাকবে।ঢাকা জেলা প্রশাসন ঢাকা শহরে ৩৫টি এবং ঢাকার পাশের উপজেলাগুলোতে সাতটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। লকডাউন চলাকালে এই আদালতগুলো একইভাবে কাজ করবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, কোনো জরুরি কারণ ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবেন না। যারা বের হয়েছেন তাদের অনেকেই জরিমানার শিকার হয়েছেন। আর মাস্ক না পরে বের হলেও জরিমানা করা হচ্ছে। আব্দুল আউয়াল জানান,"অতীতের যোকোনো সময়ের চেয়ে এবারের লকডাউনে বাইরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বের হচ্ছেন কম। ”দোকান পাট খোলা রাখার অভিযোগেও পুলিশও দণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। দুপুর পর্যন্ত ২২২টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। আটক করে জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ২৪৯ জনকে। গাড়ি থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে দুই লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকা। আর বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকা। খোলা রাখায় ১০টি দোকানের মালিককেও জরিমানা করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম জানান,"পুলিশের স্থায়ী চেকপোস্ট ছাড়াও টহল পুলিশ কাজ করছে। পুলিশের দুই জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটও কাজ করছেন।” পুলিশ মোটরযান আইন, সংক্রামক ব্যধি আইন ও মোবাইল কোর্ট আইন ব্যবহার করছে।সাত দিনের এই লকডাউনেজরুরি সেবা, শিল্প কারখানা আর হোটেল খোলা আছে শুধু খাবার নিয়ে যাওয়ার জন্য। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। মটরবাইকের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঢাকায় সুযোগ বুঝে কেউ কেউ মটরবাইক নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেছেন। জরিমানার মুখেও পড়েছেন। রিকশা চলছে। কাঁচাবাজার খোলা আছে।কারওয়ান বাজারে কাঁচাবাজারে পণ্য থাকলেও ক্রেতা কম ছিল। দাম স্বাভাবিকই আছে। আড়তদার মকবুল হেসেন জানান, শাক সবজি ঠিক মতই আসছে, তবে ক্রেতা কম। পণ্য পরিবহনের জন্য যানবাহন চলাচল করছে। পাড়া মহল্লার কাঁচাবাজার গুলোতে বেশ ভিড় ছিলো। সেখানে অনেককেই মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে।রিকশা চললেও চালকদের কথা হলো যাত্রী নেই। ফার্মগেটে বেলা দুইটার সময় সোহরাব হোসেন জানান, স্বাভাবিক সময় দুপুরের মধ্যে তারা ৫০০-৬০০ টাকা আয় করেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার লকডাউনে ২০০ টাকাও আয় হয়নি। তবে যারা জরুরি কাজে রিকশায় বাইরে বের হয়েছেন তাদের কথা, ভাড়া দ্বিগুণের বেশি।পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা বেশ বিপাকে আছে। কারখানা খোলা থাকলে তাদের জন্য কোনো যানবাহনের ব্যবস্থা নাই। ফলে তাদের অনেক কষ্ট করে পায়ে হেঁটে কারখানায় যেতে হয়।বাংলাদেশে করোনায় সংক্রমণ এবং মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতিতে সামলাতে প্রাথমিকভাবে সাত দিনের এই কঠোর লকডাউন দেয়া হয়েছে।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন," আজকে(বৃহস্পতিবার) ঢাকার যে লকডাউন পরিস্থিতি তা মোটমুটি সন্তোষজনক। তবে এরপও কাঁচাবাজার গুলোতে মানুষের ভিড় দেখা গেছে । অনেকেই মাস্ক পরেননি। বেশ কিছু অফিস খোলা ছিলো। এব্যাপারে আরো কঠোর হতে হবে।এভাবে সাত দিন নয়, কমপক্ষে ১৪ দিন লকডাউন করা গেলে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।”এদিকে ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনায় ১৪৩ জন মারা গেছেন। এপর্যন্ত মারা গেছেন ১৪ হাজার ৪৪৬ জন। ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত হয়েছেন আট হাজার ৩০১ জন। এপর্যন্ত আক্রান্ত ৯ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন। আক্রান্তের হার ২৫.৯০ ভাগ।