শিশির গুপ্তরবিবার সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিট। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ফোনে ধরলেন সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। জানালেন, গালওয়ান উপত্যকার ওয়াই-জাংশন থেকে পিছনের দিকে বেস ক্যাম্পে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে চিন।তারপরই আসরে নামেন দু'দেশের কূটনীতিবিদরা। তড়িঘড়ি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ভোভাল এবং চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-এর (চিনের বিশেষ প্রতিনিধিও তিনি) মধ্যে ভিডিয়ো কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছ'টার মধ্যে শুরু হওয়া সেই আলোচনা চলে প্রায় দু'ঘণ্টা। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘাতের জন্য কে দায়ী, গত ১৫ জুন কোন দেশের সেনার জন্য সংঘর্ষ বেঁধেছিল, তা নিয়ে যথারীতি দু'পক্ষের মতানৈক্য হয়। সেই সব ছাপিয়ে একাধিক বিষয়ে একমত হন ডোভাল এবং ওয়াং। ডোভাল জানান, পূর্ব লাদাখে ১,৫৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি এবং সৌহার্দ্য নিশ্চিত করতে চারটি পয়েন্টে (যে চারটি পয়েন্টে সংঘাত হয়েছে) ভারতের টহলদারির অধিকার চাই। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোভাল-ওয়াং আলোচনা যে সাফল্য পেয়েছে, তার জন্য অ্যাসিড টেস্টের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সেই অ্যাসিড টেস্ট ছিল - প্যাংগং সো লেকের উত্তর তীরে ভারতের টহলদারির অধিকার ফেরানো। সেই অ্যাসিড টেস্টে কিছুটা উতরোলেও এখনই রাশ আলগা করতে রাজি নয় ভারত। চিন কিছুটা সেনা সরালেও ভবিষ্যতে কোনওরকম ‘দুর্ঘটনা’ এড়াতে সতর্ক রয়েছে নয়াদিল্লি। গালওয়ান উপত্যকার তিনটি সংঘাতের জায়গা থেকে আপাতত নিজেদের ফৌজি সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এবং ফিঙ্গার ফোরে কয়েকটি কাঠামো তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে শি জিনপিংয়ের দেশের সেনা।তবে ভারতীয় সেনার এক কমান্ডার জানিয়েছেন, অন্যান্য এলাকার তুলনায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফিঙ্গার ফোর এলাকায় ঢিমেতালে সেনা সরাচ্ছে চিন। তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আগে প্যাংগং সো'তে (চিনা সেনার) চলাচলের উপর আমাদের নজর রাখতে হবে।' একইসঙ্গে তিনি জানান, সেনার অবস্থানের নিরিখে গালওয়ান, গোগরা এবং হটস্প্রিংয়ে অসুবিধাজনক অবস্থায় আছে চিন। একমাত্র প্যাংগং সো'তে চিনা সেনার অবস্থান ভালো ছিল। কারণ ইতিমধ্যে ফিঙ্গার ফোর পর্যন্ত একটি রাস্তা বানিয়ে ফেলেছে বেজিং।আধিকারিকরা জানিয়েছেন, দু'দেশই পর্যায়ক্রমিকভাবে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া চালানোর সম্ভাবনাই বেশি। প্রতিটি সংঘাতের এলাকায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন সেনা কমান্ডাররা। তবে ভিতরের এলাকাগুলিতে (ডেপথ এরিয়া) সৈন্য সমাবেশ থাকবে। ভারতীয় আধিকারিকদের বক্তব্য, সংঘাতের জায়গাগুলি বিবাদ পুরোপুরি না মিটে যাওয়া পর্যন্ত দু'দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভিতরের এলাকাগুলিতে সৈন্য সমাবেশ রেখে দেবে।