বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ একজন নিহত হয়েছেন৷ বিভিন্ন এলাকার সংঘর্ষে আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশসহ শতাধিক৷ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় বঙ্গবন্ধু সড়কে শোভাযাত্রা বের করতে গেলে পুলিশ বাধা দিলে এক পর্যায়ে সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়৷বেলা ১২টা পর্যন্ত সেখানে থেমে থেমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছিল৷ এমন সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে দেখা যায় বিএনপি কর্মীদের৷ অন্যদিকে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের সরানোর চেষ্টা করে৷ সংঘর্ষে নিহত হন ২৪ বছর বয়সি শাওন, দ্য ডেইলি স্টারকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডিউটি অফিসার নাজমুল হোসেন৷হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল হোসেন বিপুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শাওন প্রধান নামের ২০ বছর বয়সি ওই যুবকের বুকে ‘গুলির চিহ্ন' রয়েছে৷ ‘হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ এছাড়া আরও ২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।’ নিহত শাওন ফতুল্লার পঞ্চবটি নবীনগর এলাকার মৃত সাহেব আলীর ছেলে৷ তিনি যুবদলের কর্মী বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা৷জেলার পুলিশ সুপার গোলাম মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘তারা কোনও ধরনের পূর্বানুমতি ছাড়াই সড়ক অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করছিলেন৷ তাতে বাধা দিলে পুলিশের ওপর চড়াও হয় বিএনপির নেতাকর্মীরা৷ এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল ফাটানো হয় জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ছোড়ে৷’ সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের অন্তত ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার৷মানিকগঞ্জে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের খালপাড় এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটনায় ইটপাটকেলের আঘাতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ সরকারসহ তিন পুলিশ সদস্য ও দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন৷ এ ছাড়া পুলিশের লাঠিপেটায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷ ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৩ জনকে আটক করা হয়েছে৷পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে৷ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বিএনপির পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে৷ এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বেলা ১১টার দিকে শহরের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে জেলা বিএনপি৷ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শহরের উত্তর সেওতা এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে দিকে যাচ্ছিলেন৷ পথে খালপাড় এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে৷ এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়ালে একপর্যায়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ নেতা–কর্মীদের লাঠিপেটা করে৷ এতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হন।এরপর পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের ধাওয়া করলে একপর্যায়ে বিএনপির নেতা–কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন৷ এতে ইটপাটকেলের আঘাতে সদর থানার ওসি আবদুর রউফ সরকার, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন, মো. শাহীন এবং ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি আর এস মঞ্জুর রহমান ও বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধি সাজেদুর রহমান আহত হন৷ পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে৷ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে পুলিশ অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে৷ পুলিশের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেলে দলের ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন৷ এর মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর৷ এ ছাড়া পাঁচ নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে৷ এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই৷' অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ভাস্কর সাহা বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত পরে জানানো হবে৷ সদর থানার ওসি বলেন, আহত দুই কনস্টেবলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তিনিও আহত হয়েছেন৷ পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় ৷এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ঘটনায় আমি সহ আরও একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন৷' তিনি জানান, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনুমতি ছাড়া মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়৷ এতে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে৷ পরে পুলিশ টিআর শেল নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়৷ তবে, বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের কথা রয়েছে৷কুমিল্লার লাঙ্গলকোট উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ এ ঘটনায় লাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন-সহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ সকালে বিএনপির পূর্বঘোষিত জনসভা ছিল নাঙ্গলকোটে৷ বিএনপি নেতা-কর্মীরা নাঙ্গলকোট সদর বাজারে (লোটাস চত্বরে) অবস্থান নেন৷ অপরদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন নাঙ্গলকোট রেলস্টেশন এলাকায়৷ পরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়৷ এসময় বিক্ষুব্ধরা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন৷'এ ঘটনায় ওসি ফারুক হোসেন-সহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাঙ্গলকোট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কানন চৌধুরী৷ পুলিশ সুপার কাজী আবদুর রহিম জানান, আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ সেই সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পুলিশ৷ এতে লাঙ্গলকোট এ আর উচ্চ বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়৷নেত্রকোণার মদন উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে৷ এসময় মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) ২ পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন৷(বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)