ভিনরাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রত্যাবর্তনের জেরে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের মাত্রা। সম্প্রতি এমনই হিসেব পাওয়া যাচ্ছে বিহার, জাড়খম্ড, ওডিশা ও রাজস্থান থেকে। গত ১ মে থেকে এই চার রাজ্যের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিক। আর তাঁদের হাত ধরেই গ্রামীণ ভারতেও এখন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন চিকিৎসকমহল।এতদিন পর্যন্ত দেশের করোনা প্রকোপের ৮০% শিকার ছিলেন শহরবাসী ভারতীয়। গ্রামের তুলনায় চিকিৎসা পরিকাঠামো অনেক উন্নত থাকা সত্ত্বেও তার জেরেই দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬৩,০০০ ছুঁই ছুঁই। এরপর গ্রামে রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লে পরিস্থিতি যে আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ার বিলক্ষণ সম্ভাবনা রয়েছে, তা একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য পরিষেবার সহ্গে যুক্ত সকলে।গত ২৫ মার্চ দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষমার পরে অসংখ্য শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্যে বেরোজগের হয়ে চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েন। প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা তাই দলবদ্ধ ভাবে হেঁটে নিজরাজ্যে ফেরার সংকল্প করেন। জাতীয় সড়ক, রেলপথ, মাঠ, অরণ্য, এমনকি নদী পেরিয়ে মানুষের সেই ঢল প্রতিদিন এগিয়ে চলেছে এখনও। শ্রমিকদের অনেকে আবার এই জন্য সাইকেল জোগাড় করেও ঘরমুখী যাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। এরই মধ্যে বিপন্ন শ্রমিকদের ঘরে ফেরাতে গত সপ্তাহ থেকে বিশেষ ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এই সব কিছু মিলিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে বহিরাগতদের ভিড় আচমকা বাড়তে শুরু করেছে। ঘরে ফিরে আসা শ্রমিকদের দুই সপ্তাহ বাধ্যতামূলক বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন রাখার বিধি চালু হলেও গ্রামাঞ্চলে তার জেরে জীবাণু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যে বড়সড় ছন্দপতন ঘটতে শুরু করেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে সাম্প্রতিক সমীক্ষাতেই। বিহার, ঝাড়খম্ড, ওডিশা ও রাজস্থানে গত এক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্বীকার করেছে, দেশজুড়ে গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এবং সমবায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যথাক্রমে ২২% ও ৩০% ঘাটতি রয়েছে। এই ব্যাপারে তালিকার শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান ও মধ্য প্রদেশের মতো রাজ্যগুলি। ঘটনা হল, রাস্তায় নেমে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকাংশ এই ছয় রাজ্যেরই বাসিন্দা। তাই এই মুহূর্তে ঝুঁকির পাল্লা একটু বেশিই রয়েছে এই রাজ্যগুলির।