একটি নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, বিভিন্ন মহাসাগরে ৫ হাজারেরও বেশি নতুন ভাইরাস প্রজাতি সনাক্ত হয়েছে।গবেষকরা বিশ্বজুড়ে সমুদ্রগুলির জলের হাজার হাজার নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। মূলত আরএনএ ভাইরাসের খোঁজ করেন তাঁরা। এই ভাইরাসগুলি ডিএনএ ভাইরাসের তুলনায় কম অধ্যয়ন করা হয়।নতুন প্রাপ্ত ভাইরাসগুলির মধ্যে বৈচিত্র্য এতটাই বেশি যে, গবেষকরা RNA ভাইরাসকে শ্রেণীবদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাক্সোনমিক গ্রুপের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছেন। বর্তমান ৫টি ফাইলাম থেকে ১০টি ফাইলাম। (ফাইলাম হল কিংডমের পরের শ্রেণিবিন্যাস)'এখানে অনেক নতুন বৈচিত্র্য রয়েছে একটি সম্পূর্ণ নতুন ফাইলাম, 'তারাভিরিকোটা', সমগ্র মহাসাগরে মিলেছে। এটি এই ইঙ্গিতই করে যে তারা পরিবেশগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ,' বললেন গবেষণার প্রধান লেখক ম্যাথিউ সুলিভান, ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক।সুলিভানের মতে, আরএনএ ভাইরাসের অধ্যয়নের মাধ্যমে সাধারণত রোগের কারণের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। কিছু সুপরিচিত আরএনএ ভাইরাসের মধ্যে রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইবোলা এবং করোনাভাইরাস। কিন্তু এগুলি পৃথিবীতে আরএনএ ভাইরাসের একটি 'সামান্য অংশ মাত্র', জানান তিনি।বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্টে, গবেষকরা বিশ্বের পাঁচটি মহাসাগরের ১২১টি স্থান থেকে জলের ৩৫ হাজার নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। গবেষকরা এক মহাসাগর কনসোর্টিয়ামের অংশ। এই কনসোর্টিয়ামটি সমুদ্রের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অধ্যয়ন করার এক আন্তর্জাতিক উদ্যোগ।তাঁরা প্ল্যাঙ্কটন নামে পরিচিত ছোট জলজ জীব থেকে আহরিত জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষা করেন। এগুলি সাধারণত আরএনএ ভাইরাসের কমন হোস্ট। RdRp নামক এক প্রাচীন জিনের সন্ধান করা হয়। এটি সমস্ত আরএনএ ভাইরাসে পাওয়া যায়, তবে অন্যান্য ভাইরাস এবং কোষে অনুপস্থিত। তারা এই জিনের সঙ্গে ৪৪ হাজারেরও বেশি সিকোয়েন্স সনাক্ত করেছে। কিন্তু RdRp জিন বিলিয়ন বছরেরও বেশি পুরনো। এটি বহুবার বিবর্তিত হয়েছে। কারণ জিনের বিবর্তন এত পুরনো হওয়ায়, গবেষকদের পক্ষে ক্রমগুলির মধ্যে বিবর্তনীয় সম্পর্ক নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। তাই গবেষকরা সেগুলি সংগঠিত করতে মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্য নেন।সামগ্রিকভাবে, প্রায় ৫,৫০০ টি নতুন আরএনএ ভাইরাসের প্রজাতি সনাক্ত হয়েছে। সেগুলি বিদ্যমান পাঁচটি ফাইলার মধ্যেই পড়ে। সেই সঙ্গে পাঁচটি নতুন প্রস্তাবিত ফাইলাও স্থির হয়েছে। সেগুলির নাম তারাভিরিকোটা, পোমিভিরিকোটা, প্যারাক্সেনোভিরিকোটা, ওয়ামোভিরিকোটা এবং আর্কটিভিরিকোটা।তারাভিরিকোটা ফাইলামে ভাইরাসের প্রজাতি বিশেষত নাতিশীতোষ্ণ এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলে বেশি করে মিলেছে। অন্যদিকে আর্কটিভিরিকোটা ফাইলামের ভাইরাসগুলি আর্কটিক মহাসাগরে বেশি পরিমাণে মিলেছে।গবেষকদের মতে, সময়ের সঙ্গে RdRp জিনটি কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তা অধ্যয়নের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রাথমিক পর্যায়ে জীবন কীভাবে বিবর্তিত হয়েছিল, তা আরও ভাল করে বোঝা যেতে পারে। 'RdRp-কে সবচেয়ে প্রাচীন জিনগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়। এটি ডিএনএর প্রয়োজনীয়তা আসার আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল,' লিখেছেন গবেষণার সহ-প্রথম লেখক আহমেদ জায়েদ, ওহিও স্টেটের মাইক্রোবায়োলজির গবেষক। 'সুতরাং আমরা কেবল ভাইরাসের উত্সেরই সন্ধান করছি না, তার পাশাপাশি জীবনের উত্সও খুঁজছি,' বললেন তিনি।