আইএসএলে এখনও পর্যন্ত কোনও ডার্বি জেতেনি এসসি ইস্টবেঙ্গল। এই মরশুমেও প্রথম লেগের ম্যাচে ৩-০ হেরেছে তারা। আদৌ কি তারা এ বার জিততে পারবে? বিশেষ করে সোমবার হায়দরাবাদ এফসি-র কাছে ০-৪ গোলে হেরে যে ধাক্কা তারা খেয়েছে, তার পর মাত্র চার দিনের ব্যবꦬধানে কী ভাবে নিজেদের সামলে নিয়ে ডার্বিতে জয়ে ফিরতে পারবে এসসি ইস্টবেঙ্গল, এটাই এখন বড় প্রশ্ন।
এ দিকে এই মরশুমে এটিকে💃 মোহনবাগানও খুব একটা ভালো ছন্দে নেই। ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তারা আপাতত লিগ টেবলের আট নম্বরে। আগের ম্যাচে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করেছে তারা। এ দিকে ১৩ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার লাস্টবয় এসসি ইস্টবেঙ্গল। তারা এবার আইএসএলে এখনও পর্যন্ত একটি ম্যাচেই জয় পেয়েছে।
দেখে নেওয়া যাক, ডার্বির আগে প্রতিটি পজিশনে�🐎� দুই দলের তুলমূল্য অবস্থান:
রক্ষণে প্রায় সমান সমান
প্রথমে রক্ষণের কথায় আসা যাক। দুই দলেরই রক্ষণ তেমন মজবুত নয় এবং ধারাবাহিকও নয়। কোন ম্যাচে তাদের ডিফেন্ডাররা কেমন খেলবেন, তা আগে থেকে আন্দাজ করা কঠিন। সব ম্যাচেই তাদের কাছ থেকে ভাল খেলা কঠি𓄧ন। তুলনামু🔯লক ভাবে এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণ এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণের চেয়ে এগিয়ে আছে বলে মনে হলেও পরিসংখ্যান কিন্তু অন্য কথা বলছে।
দুই দলের গোল খাওয়ার পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যাবে এসসি ইস্টবেঙ্গল যেখানে ১৩ ম্যাচে ২৫ গোল খেয়েছে, সেখানে এটিকে মোহনবাগান ১০🍌 ম্যাচে ১৮ গোল খেয়েছে। অর্থাৎ যেখানে ম্যাচ প্রতি গড়ে ১.৯২ গোল খেয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল, সেখানে এটিকে মোহনবাগানের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান ১.৮০। খুব বেশি এগিয়ে নেই সবুজ-মেরুন শিবির। দুই দলই দু’বার করে ‘ক্লিন শিট’ রেখে মাঠ ছেড়েছে। কিন্তু লাল-হলুদের ম্যাচে♕র সংখ্যা যেহেতু সবুজ-মেরুনের চেয়ে তিনটি বেশি, তাই এই ব্যাপারে কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন প্রীতম কোটালরাই।
গোলকিপারদের লড়াইয়ে অবশ্য এগিয়ে এসসি ইস্টবেঙ্গলই। এটিকে মোহনবাগানের গোলকিপার অমরিন্দর সিং যেখানে ১০ ম্যাচে ২৬টি সেভ করেছেন, সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গলের অরিন্দম ভট্টাচার্য (৮/২৩), শুভম সেন (৭/৪) ও শঙ্কর রায় (১/১) তিনজনে মিলে ১৩ ম্যাচে ৩৬টি গোল বাঁচিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদের ম্যাচ প্রতি সেভের গড় ২.৭৭ এবং অমরিন্দরের গড় ২.৬। ট্যাকলের দিক থেকেও খুব সামান্🔴যই তফাৎ দুই পক্ষের মধ্যে (নীচে পরিসংখ্যান দেখুন)। এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলাররা যেখানে প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩২.৮টি করে ট্যাকল করেছেন, সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা ম্যাচ প্রতি গড়ে ৩২.৭টি করে ট্যাকল করেছেন এ পর্যন্ত।
শুরুর দিকে বেশি শক্তিশালী ছিল না লাল-হলুদের ডিফেন্স। কিন্তু হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে প্রথম লেগের ম্যাচ থেকে তাদের রক্🅠ষণ জমাটবদ্ধ হতে শুরু করে ও হোসে মানুয়েল দিয়াজের জায়গায় রেনেডি সিং যখন অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন, তখন থেকেই এসসি ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্স যথেষ্ট ভালܫ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। কিন্তু সোমবার হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে ফিরতি লেগের ম্যাচে তাদের সেই পুরনো রোগ ফের দেখা গিয়েছে।
আক্রমণে ধারালো সবুজ-মেরুন
কোচেরা বলেন রক্ষণ ও আক্রমণের মধ🐓্যে সঠিক ভারসাম্যই হল ভাল ফুটবলের জাদুমন্ত্র। কিন্তু কলকাতার দুই দলে এ বারে তা প্রায় নেই বললেই চলে। একই সঙ্গে রক্ষণ ও আক্রমণ বিভাগ ভাল খেলেছে, তাদের এমন ম্যাচ কমই দেখা গিয়েছে এ বারের হিরো আইএসএলে। দিয়াজের সময় আক্রমণ বা রক্ষণ কোনওটাই ভাল ছিল না দলের। রেনেডি দায়িত্ব নেওয়ার পরে রক্ষণের ওপরই জোর দেন। কারণ, ধারালো আক্রমণ করার মতো ফুটবলার তাঁর হাতে তখন ছিল না। নতুন স্প্যানিশ কোচ মারিও রিভেরা এসে দুই বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্🍎টা করেন, যা কাজে লাগে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ২-১ জয়ে। কিন্তু গত ম্যাচে ফের সব কিছুরই দফা রফা হয়ে গিয়েছে। রক্ষণ, আক্রমণ কোনওটাই ঠিক হয়নি সে দিন। এই অবস্থার উন্নতি না হলে ডার্বিতে হয়তো ফের হারতে হবে লাল-হলুদ বাহিনীকে।
গোল করার পরিসংখ্যান দিয়েই বোঝা যায় আক্রমণে কতটা এগিয়ে এটিকে মোহনবাগান। এ পর্যন্ত দশটি ম্যাচে ২০টি গোল পেয়েছে তারা। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ম্যাচে দু’টি করে গোল করেছেন রয় কৃষ্ণারা এবং জিতেছে চারটি ম্যাচ। কিন্তু এসসি ইস্টবেঙ্গল এ পর্যন্ত ১৩ ম্যাচে ১৩ গোল করেছ🍸ে। অর্থাৎ গড়ে একটি করে গোল রয়েছে তাদের। চিরপ্রতিদ্বন্দীদের তুলনায় অর্ধেক। জয়ꦅের সংখ্যা মাত্র এক।
গোলের উদ্দেশ্যে ক্রস বাড়ানোর সংখ্যা ও গড় হিসেবেও এটিকে মোহনবাগান অনেকটাই এগিয়ে। দশ ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলাররা যেখানে ১০ ম্যাচে ৯৫টি ক্রস বাড়িয়েছেন (গড় ৯.৫), সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গলের ক্রসের সংখ্যা ১৩ ম্যাচে ১০১ (গড়ে ৭.৭)। আসলে সবুজ-মেরুন শিবিরে যেখানে হুগো বুমৌস (৫ গোল), লিস্টন কোলাসো (৫), রয় কৃষ্ণা (৪), ডেভিড উইলিয়ামসের (২) মতো স্কোরার রয়েছে, সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গলে আন্তোনিও পেরোসেভিচ ছাড়া তেমন ক💖েউই নেই। তাও মাঝখানে পাঁচটি নির্বাসিত হয়ে মাঠের বাইরে বসে ছিলেন তিনি। ফলে দলের গোলের সংখ্যা তেমন বাড়েনি। মাঝখানে সেমবয় হাওকಞিপ (২), আমির দার্ভিসেভিচ (২) ও নাওরেম মহেশরা (২) জ্বলে উঠেও নিভে গিয়েছেন। আক্রমণে ধারাবাহিকতার এই অভাবই এসসি ইস্টবেঙ্গলকে পিছিয়ে রেখেছে। গোল না করতে পারলে যে ফুটবলে জেতা যায় না।
সারা মাঠের খেলায় পিছিয়ে লাল-হলুদ
সারা মাঠের পারফরম্যান্সের দিক থেকে কে কোথায় দাঁড়িয়ে, সে🦩টাও একবার দেখে নেওয়া যাক। আধুনিক ফুটবলে যেখানে বেশিরভাগ কোচই পাসিং-নির্ভর ফুটবল পছন্দ করে, সেখানে এটিকে মোহনবাগান এ পর্যন্ত ১০ ম্যাচে ৩৫১১টি পাস খেলেছে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ম্যাচে ৩৫১.১টি করে পাস করেছে তারা।
অন্য দিকে, এ পর্যন্ত প্রতি ম্যাচে ২৬২.৬-এর গড়ে ১৩ ম্যাচে ৩৪১৪টি পাস করেছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। এফসি গোয়া যেখানে ১৩ ম্যাচে প্রায় ছ’﷽হাজার পাস করেছে এবং মুম্বই সিটি এফসি🎃 যেখানে ৪৭৪৫টি পাস খেলেছে ১১ ম্যাচে, সেখানে কলকাতার দুই দল এই পরিসংখ্যানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু দুই দলের তুলনা আসে যেখানে, সেখানে এটিকে মোহনবাগান কিছুটা হলেও এগিয়ে।
টাচের সংখ্যার দিক থেকেও এটিকে মোহনবাগান তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দীর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। সবুজ-মেরুন শিবির যেখানে ১০ ম্যাচে ৫৩৬১ বার টাচ করেছে, সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা ১৩ ম্যাচে বলে পা লাগিয়েছেন ৫৮৩৮ বার। তারা যেখানে গড়ে প্রতি ম্যাচে ৪৪৯ বার করে বলে পা ছুঁইয়েছে, সেখানে এটিকে মোহনবাগানের টাꦛচের গড় প্রতি ম্যাচে ৫৩৬.১। এ দিক থেকেও তারা কিছুটা হলেও এগিয়ে।
জয়ের শতকরা হিসেবে অনেক ফারাক
অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে লি♛গ টেবলে এসসি ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে চার ধাপ এগিয়ে থাকলেও এটিকে মোহনবাগান পারফরম্যান্সের পরিসংখ্যানের গড় হিসেবে তাদের চেয়ে যে সব বিষয়েই এগিয়ে রয়েছে, তা কিন্তু নয়। আক্রমণ বিভাগ ও সারা মাঠের খেলায় এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে থাকলেও রক্ষণে কিন্তু দুই দলই কিন্তু প্রায় একই তিমিরে। সেই কারণেই চলতি মরশুমে এসসি ইস্টবেঙ্গলের জয়ের শতকরা হিসেবও মোটেই ভাল না। গতবারের রানার্স আপ এটিকে মোহনবাগান যেখানে দশটির মধ্যে চারটি ম্যাচ, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ ম্যাচ জিততে পেরেছে, সেখানে এসসি ইস্টবেঙ্গল তাঁদের মাত্র ৭.৭ শতাংশ ম্যাচ জিততে পেরেছে।
শীর্ষে থাকা হায়দরাবাদ তাদের ৪২.৭ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে। অথচ পরের দুই দল যথাক্রমে কেরালা ব্লাস্টার্স ও জামশেদপুর এফসি তাদের ৪৫.৪৫ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে। চতুর্থ স্থানে থাকা চেন্নাইন এফসি-ও হা✤য়দরাবাদের মতো তাদের ৪২.৭ শতাংশ ম্যাচ জিতেছে। অবাক করার বিষয় পাঁচে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-ও হায়দরাবাদের চেয়ে বেশি ৪৫.৪৫ শতাংশ ম্যা🍷চ জিতেছে। শতাংশের হিসেবে ছয়ে থাকা ওডিশা এফসি-ও হায়দরাবাদের সমান ম্যাচ জিতেছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে লিগ টেবলের ওপরের দিকে থাকা দলগুলোর মধ্যে। এই অবস্থায় একটি জয় মানেই অনেকটা লাফিয়ে ওঠা এবং একটি হার মানে অনেকটাই তলিয়ে যাওয়া। শনিবার এই কথা মাথায় রেখেই নিশ্চয়ই ডার্বি খেলতে নামবে কলকাতার দুই দল।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।