সবুজ-মেরুন জার্সিতে কখনও খেলেননি জামশিদ নাসিরি। বরং লাল-হলুদ জার্সিতেই তিনি ময়দান কাঁপিয়েছেন। আর তাঁর পারফরম্যান্সের হাত ধরেই বারবার কেঁপে উঠেছে সবুজ-মেরুনের রক্ষণ। কিন্তু তাঁর ছেলেই শনিবার লাল🥀-হলুদের রক্ষণে একেবারে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন। ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করে কিয়ান নাসিরি তাঁর বাবার প্রিয় টিম ইস্টবেঙ্গলকেই ল্য়াজেগোবরে করেছেন। তবে ছেলের এই সাফল্যে নিঃসন্দেহে উচ্ছ্বসিত জামশিদ। প্রিয় টিম ১-৩ হারায় তাঁর খারাপ লাগা আছে বটে, কিন্তু ছেলের জন্য তিনি গর্বিত, উচ্ছ্বসিত।
জামশিদ নাসিরির সঙ্গে ܫকথা বলার সময়েও তাঁর গলায় ছিল আবেগের ছোঁয়া। তিনি বলছিলেন, ‘এটা আমার কাছে খুবই আনন্দের মুহূর্ত। বাবা হিসেবে খুব গর্বিতও। ও যাতে ভবিষ্যতে এমন অনেক সাফল্য পায়, তার জন্য শুভেচ্ছা থাকবে আমার। থাকবে আশীর্বাদ।’ এর সঙ্গে অবশ্য ছেলে কিয়ানকে মূল্যবান পরামর্শও দিয়েছেন বাবা জামশিদ। তিনি বলেছেন, ‘তবে এটা সবে শুরু। ফোকাস ঠিক রাখতে হবে। এই সাফল্যে মাথা ঘুরে গেলে চলবে না। এটা সবে জীবনের শুরু, শেষ নয়। তাই মাটিতে পা রেখে এগিয়ে যেতে হবে। সামনে আরও বড় বড় ম্যাচ রয়েছে। ফোকাস ঠিক রাখার পাশাপাশি একই সঙ্গে মনোযোগ বাড়াতে হবে।।’
কিয়ানের হ্যাটট্রিকের পর ৪২ বছর আগের স্মৃতি ভেসে আসছে সিনিয়র নাসিরির মনে। ছেলের খেলার মধ্যে হয়তো নিজেকেই যেন খুঁজে পেয়েছেন। যে কারণে নস্ট্যালজিক হয়ে পড়েছিলেন জামশিদ। বলছিলেনও, ‘কলকাতা ময়দানে আমার প্রথম ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ১৯৭৯-১৯৮০ সালের ফেড কাপের কথা সেই ম্যাচের কতা। হ্যালের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচেই আমি গোল পেয়েছিলাম। আমার সঙ্গে কিয়ানের তুলনা করব না। তবে আমার পুরনো দিনগুলো যেন হঠাৎ করেই𝓡 কিয়ানের হাত ধরেই ফিরে এল।’
মাত্র ৬ বছর বয়সে ফুটবলে হাতেখড়ি কিয়ানের। তিনি লিওনেল মেসির অন্ধ ভক্ত। আমেরিকায় কোকাকোলা কোচিং ক্যাম্পে ফুটবলে🐭র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কিয়ান। তার পর অনূর্ধ্ব-১৩ বাংলা দলে সুযোগ পান। কল্যাণীতে একটি টুর্নামেন্টে প্রথম নজরে পড়েন। মোহনবাগানের জুনিয়র দলেও খেলেছেন। কলকাতা লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন। তার পর মোহনবাগান মাঠে অনুষ্ঠিত জি ফুটবল টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচে গোলও করেছিলেন। সেখানেই সবুজ মেরুন কর্তাদের চোখে পড়েন। বাকিটা ইতিহাস। তবে আনন্দের দিনেও রয়েছে আক্ষেপের সুর। গ্যালারিতে বসে ছেলের অবিশ্বাস্য কীর্তি না দেখতে পাওয়ার আফশোস করছিলেন জামশিদ নাসিরি।
আবেগপ্রবণ বাবা বলছিলেন, ‘ডার্বিতে যে ও হ্যাটট্রিক করবে ভাবিনি। তবে জানতাম সুযোগ পেলে নিজেকে প্রমাণ করবেই। প্রার্থনা করছিলাম যাতে অন্তত ১০-১৫ মিনিট খেলার সু♛যোগ পায়। কোনও ম্যাচের আগে ওর সঙ্গে ফুটবল নিয়ে আমার কথা হয় না। আমি শুধু ওর খেলা দেখি। ও নিজের দায়িত্বটা ভালো করেই জানে। ছোটবেলা থেকে ও ফুটবলের এই পরিবেশ দেখেই অভ্যস্ত। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের জার্সির মাহাত্ম্য জানে। সাপোর্টারদের আবেগ দেখেছে। যে কারণে ও বরাবরই খুব ফোকাসড এবং নিষ্ঠাবান। ফুটবল নিবেদিত প্রাণ। কিন্তু খুব বেশি খেলার সুযোগ পাচ্ছিল না। আজকে সেটা পেয়ে কাজে লাগিয়েছে।’ মাত্র ২১ বছর বয়সে ডার্বিতে হ্যাটট্রিক। আইএসএলের ইতিহাসে কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে এই নজির গড়লেন কিয়ান। জামশিদ চান ভবিষ্যতে যেন কিয়ান একদিন ভারতের জার্সিতে খেলেন। বলেওছেন, ‘আমি চাই এক দিন ভারতের হয়ে খেলুক কিয়ান।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।