নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিতে মারা যাওয়া শাওন প্রধানকে পুলিশের উপস্থিতিতে কবর দেওয়া হয়েছে। ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা জানান শাওনের চাচা ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী৷ তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ২টার দিকে নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শাওনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়৷ পরে নবীনগর কবরস্থানে তাকে কবর দেওয়া হয়৷ জানাজা ও নামাজের সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল৷২০ বছর বয়সি শাওন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ও বক্তাবলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পূর্ব গোপালনগর এলাকার সাহেব আলীর ছেলে৷ নবীনগর শাহ্ওয়ার আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে শাওনদের একতলা বাড়ি৷ ময়নাতদন্তের পর শাওনের মরদেহ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে তার বড় ভাই মিলন প্রধান এবং মামা মোতাহার হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ মরদেহ হস্তান্তরের আগে পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল হাসপাতালের মর্গের সামনে অবস্থান নেয়৷ স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের পাহারায় অ্যাম্বুলেন্সে এলাকায় আসে শাওনের মরদেহ৷ আগেই জানাজা ও কবরের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা ছিল৷ লাশ আসার পরপরই ‘তড়িঘড়ি' করে শাওনের দাফন সম্পন্ন করা হয়৷ এ সময় বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিল৷প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল দশটায় নগরীর ডিআইটিতে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নেয়৷ এতে পুলিশ বাধা দিলে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়৷ বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই সংঘর্ষ৷ এই সময় গুলিবিদ্ধ হয় শাওন৷ সংঘর্ষের দিন যুবদলের মিছিলের অগ্রভাগে দেখা গেছে শাওনকে৷বিএনপির নেতা-কর্মীরা শাওনকে যুবদল কর্মী বলে চিহ্নিত করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাকে যুবলীগের কর্মী দাবি করে রাতে বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে৷ সারারাত নিহতের বাড়ির সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান ছিল৷ তবে নিহতের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা শওকত আলীর ভাষ্য, শাওন যুবদল বা যুবলীগ কোনও দলেরই কর্মী না৷বৃহস্পতিবার রাতে শওকত আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বিএনপির মিছিলে সে গিয়েছে একথা সত্য৷ ছবিতে, ভিডিয়োতে সেটাই দেখা গিয়েছে৷ অস্বীকার করার তো সুযোগ নাই৷ তবে যুবদলে সক্রিয়ভাবে ছিল না শাওন৷ স্থানীয় পোলাপানের সঙ্গে মিটিং-মিছিলে যেত৷’তবে শাওনের অন্যান্য স্বজন ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, চাচা আওয়ামী লীগ নেতা হলেও শাওন বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন৷ যুবদলের আসন্ন কমিটিতে পদ পাওয়ারও কথা ছিল তার৷ কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নিতো সে৷শাওন এনপির বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে এমন বেশ কয়েকটি ছবিও পাওয়া যায়৷ সংঘর্ষের দিনও যুবদলের মিছিলের অগ্রভাগে ছিল শাওন৷ ওই মিছিলে শাওনের বা পাশে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান, জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন চৌধুরী সালামতকেও দেখা গিয়েছে৷নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় তিনজন ছাত্রলীগ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্থানীয় মৎস্যজীবী দল নেতা শাহ্ আলী ও সলিমউল্লাহ হৃদয়, যুবদল নেতা আমির বেপারী ও মোহসীন বেপারীর সঙ্গে শাওনের বেশি সখ্য ছিল৷ বৃহস্পতিবারও তাদের সঙ্গেই বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলে গিয়েছিল শাওন৷