ড. প্রিয়দর্শী মজুমদার ও সন্দীপ দে
কে না ভালোবাসে বেড়াতে!! নিজের পকেটের জোর অনুযায়ী সব মানুষই অল্প-বিস্তর বেরিয়েই থাকেন| কারও পছন্দ পাহাড় তো, কেউ বা ভালোবাসেন সমুদ্র। কারও প্রিয় মরুভূমি, আবার কেউ বা চান জঙ্গল সাফারির আনন্দ নিতে| এই ধরণের ভ্রমণ সবই কম-বেশি খরচ সাপেক্ষ, কতটা দূরে যেতে চাইছি, সেট🏅া আমার রাজ্য বা দেশের মধ্যে কিনা, নাকি বিদেশে তার উপর নির্ভর করে আমার বাজেট তৈরি করতে হয়|
কিন্তু এমন একটা মজাদার ভ্রমণের কথা যদি ভাবা যায় যেখানে আদৌ কোথাও না গিয়েই (বা সামান্য একটু দূরত্বে🌳 গিয়ে) আমরা বহুদূরের অসীমকে উপলব্ধি করতে পারি তাহলে কেমন হয়? ভাবছেন এও আবার সম্ভব নাকি? নির্ঘাত ছেলে ভোলানো কথা বলছি; তা কিন্তু একদমই নয়|
আসলেই কোনও 🎉বাস্তব ভ্রমণের কথা কিন্তু আমরা বলছি না; এ এক অনিন্দ্যসুন্দর কল্পভ্রমণ| মহাকাশে পাড়ি না দিয়েও মহাকাশ ভ্রমণ| এই ভ্রমণের জন্য কোন মহাকাশযান বা স্ꦐপেসস্যুটের প্রয়োজন হয় না| আপনার প্রয়োজন দূষণ এবং মেঘ-মুক্ত একটুকরো পরিষ্কার আকাশ, একটা অন্ধকার রাত্রি, একটা টেলিস্কোপ (সঙ্গে একটা স্মার্টফোন থাকলে খুব ভালো হয়) এবং তার সঙ্গে প্রয়োজন ধৈর্য, আবেগ আর উত্তেজনা|
প্রথমেই বলে রাখা যাক দূষণ-মুক্ত আকাশ পেতে গেলে আপনাকে শহর ছেড়ে একটু গ্রামের দিকে যেতেই হবে| কলকারখানা༒র বিষাক্ত ধোঁয়াহীন গ্রামের পরিবেশ মহাকাশ পর্যবেক♐্ষণের জন্য আদর্শ| আর মেঘ বা বৃষ্টির ব্যাপারটা অনেকটাই প্রকৃতির হাতে| তবে স্বাভাবিকভাবেই বর্ষাকাল মহাকাশে কল্প-ভ্রমণের জন্য একদমই উপযুক্ত নয়| আর গ্রীষ্মকালের তুলনায় শীতকালেই আকাশ তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই পরিষ্কার থাকে|
এখন প্রশ্ন হল, মাসের ঠিক কোন সময়টা মহাকাশ পর্যবেক্ষণের জন্য আ🌞দর্শ? স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, পূর্ণিমাতে চাঁদের বেশি ঔজ্জ্বল্য বা অমাবস্যার সম্পূর্ণ চাঁদহীন আকাশ কোনোটাই এক্ষেত্রে সঠিক সময় নয়| আকাশে খুব বেশি আলো থাকলে বা একদমই কম আলো থাকলে টেলিস্কোপ দিয়ে গ্রহ নক্ষত্রগুলি (বিশেষ করে চাঁদের আশেপাশে💃র অঞ্চলের) পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেবে| এক্ষেত্রে দেখা যায় যে পূর্ণিমার চার বা পাঁচ দিন পরের আকাশ সবথেকে আদর্শ|
আপনার বাজেট অনুযায়ী, ব🐠াজারচলতি একটা টেলিস্কোপ কিনে ফেলতে পারেন| কাঁচের ব্যাস আর টেলিস্কোপের দৈর্ঘ্য যত বাড়বে, বহু দূরের বস্তুকে কাছে নিয়ে আসার ক্ষমতা আর টেলিস্কোপের দামও ততই বাড়তে থাকবে| টেলিস্কোপ জোগাড়ের সঙ্গে-সঙ্গে মহাকাশের একটা প্রাথমিক পাঠ নেওয়াও জরুরি| মহাকাশ চেনানোর প্রাথমিক পাঠ সংক্রান্ত কোনও বই কিনতে পারেন বা আপনার স্মার্টফোনে এই সংক্রান্ত কোনও প্রয়োগ ইনস্টল করে নিতে পারেন| এই জাতীয় প্রয়োগে ঠিক আপনার মাথার উপরের আকাশ এখন কেমন বা কয়েকদিন আগে কেমন ছিল বা কয়েকদিন পরে কেমন থাকবে, সবকিছুই আপনি দেখতে পাবেন, তা সে পৃথিবীর যে জায়গাতেই আপনি থাকুন না কেন|
রাতের আকাশের মূল আকর্ষণ তো চাঁদ অবশ্যই। তবে তার সঙ্গে-সঙ্গে মঙ্গল, শুক্রের মতো পৃথিবীর কাছের গ্রহগুলি, ধ্রুবতারা, লুব্ধক তারা, সপ্তর্ষিমণ্ডল, কালপুরুষ, সর্পিল ছায়াপথ (স্পাইরাল গ্যালাক্সি), গ্যাসীয় নেবুলা, যুগ্ম তারা এরকম আরও অনেক জ্যোতিষ্ক পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব| তবে এটাও ঠিক যে সাধারণ দুই 🍸ইঞ্চি বা তিন ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপের সাহায্যে আপনি এই মহাকাশীয় বস্তুগুলিকে খুব বেশি বড় বা স্পষ্ট দেখতে পাবেন না| তাই চাঁদের এবড়ো-খেবড়ো তলের গর্তগুলিকে যদি একদম নিজের চোখের সামনে এনে উত্তেজনা অনুভব করতে চান, তবে আপনার জন্য আদর্শ, একটু বড় মাপের টেলিস্কোপ লাগবে|
ভয় নেই!! সেটা আপনাকে কিনতে হবে না| কলকাতার কাছেই এমন জায়গা আছে যেখানে গিয়ে আপনি ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপ 𝔍বশিষ্ঠ আর ১২ ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপ অরুন্ধতী দিয়ে প্রাণ ভরে মহাকাশে আপনার কল্প-ভ্রমণ সুসম্পন্ন করতে পারবেন| ন্যূনতম খরচে ঘুরে আসুন সীতাপুর| একটা নিখুঁত গ্রামের পরিবেশ, ধানক্ষেত, বাঁশঝাড়, গাছগাছালির জঙ্গল, অসাধারণ মেঠো পথ, মুক্ত বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া, টাটকা মাছের ঝোল, সঙ্গে গ্রামের মানুষের আন্তরিক আতিথেয়তা, দূষণহীন মুক্ত আকাশ আর রাত জেগে টেলিস্কোপে চোখ রেখে মায়াময় অনন্ত আকাশে হারিয়ে যাওয়ার হাতছানি|
সম্প্রতি আমরা দুই শিক্ষক বিভাগীয় ছাত্রছাত্রীদেরཧ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম পশ্চিম মেদিনীপুরের সীতাপুরে ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের এই মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে| সত্যিই গায়ে কাঁটা দেওয়💛া এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকলাম আমরা| অন্ধকার এক টুকরো ছোট্ট ছাদে টেলিস্কোপ নিয়ে কাড়াকাড়ি করে আকাশ দেখা| সঙ্গে ফাউ এখানকার বিজ্ঞানীদের মহাকাশ সংক্রান্ত কিছু বক্তৃতা| আপনারাও এখানে মহাকাশে কল্পভ্রমণ সেরে আসতে পারেন (অবশ্যই প্রতিষ্ঠানটির শর্ত মেনে)| দিনের বেলা অসাধারণ গ্রামটা একটু ঘুরে বেড়িয়ে নিন আর সন্ধ্যে হলেই ঝপ করে টেলিস্কোপের নিচে বসে পড়ুন লেন্সে চোখ রেখে দেখে নিন আপনার চেনা-অচেনা মহাকাশ আর হারিয়ে যান তার গভীরে|
-----🐽----------------------------------------------------------------------
লেখ🐭কদ্বয় কলকাতার ব্যারাকপুর রা♑ষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইলেকট্রনিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক|