রফিকুল আলম মুকুলসেই সময়ের কথা মনে করতে গেলেই একটা ভয়াবহতা ভেসে ওঠে চোখের সামনে। আমার পিতা এ. কে. এম. মনিরুজ্জামান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক রংপুর জেলার সৈয়দপুরে রেলের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তিনি। তখন পাকিস্তানী অধ্যুষিত অঞ্চল ছিল সৈয়দপুর। রেল কারখানার বেশিরভাগটাই ছিল বিহারি পাকিস্তানীদের দখলে। আমার বাবা ছিলেন প্রগতিশীল মানুষ। তিনি পাকিস্তানী বিদ্বেষী ছিলেন।সেই সময় পাকিস্তানীদের কাছে টার্গেট হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭০ সালে নির্বাচনের পর থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সারা দিয়েছিলেন আমার শহিদ বাবা। ৭ মার্চের ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন তিনি। বই পড়তে খুব ভালবাসতেন। একদিন বই পড়ার সময় পাকিস্তানী সেনারা এসে দোতলার ঘরে ঢুকে ধরে ফেলে তাঁকে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ আমার বাবাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর শরীর টুকরো টুকরো করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। পরে কুকুর খুবলে খেয়েছিল।যুদ্ধকালীন সময় আমরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমার বয়স তখন ৫ বছর। ইন্দিরা গান্ধী না থাকলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমাদের অসহায় পরিবার ভারতের সহযোগিতা পেয়েছিল। আমরা শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলাম মানপুরে। সেখানকার শরণার্থী শিবিরে ছিলাম। পরে বাংলাদেশে ফিরে আসি।বঙ্গবন্ধু আমার মায়ের হাতে নিজের স্বাক্ষর করা সনদ এবং ২০০০ টাকা তুলে দিয়েছিলেন। তিনি জীবিত থাকলে আমাদের পরিবারের আরও মূল্যায়ন হত। বাঙালি জাতির প্রতি তাঁর আত্মত্যাগ ভোলা যাবে না। বঙ্গবন্ধুই সবাইকে এক করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য। আমার সেই বাবা অনেকের মধ্যে একজন। বাবার কথা মনে পড়লে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি।