শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিচ্ছেদের পথ কার্যত প্রশস্ত হয়ে গিয়েছে। যত সময় যাচ্ছে, তৃণমূলের থেকেও ঘুরিয়ে বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে শুভেন্দু-পর্বে দ্রুত ইতি টানতে চাইছে ঘাসফুল শিবির। শুভেন্দুকে উদ্দেশ করে সৌগত রায়ের চরম কটাক্ষের পর তেমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।বৃহস্পতিবার বরানগরে শুভেন্দুকে কার্যত ‘ইঁদুর’-এর সঙ্গে তুলনা করে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘পার্টি যখন কঠিন সময়ের মধ্যে থাকে, তখন কিছু ইঁদুর আছে, যারা জাহাজ ডুবল ভেবে ঝাঁপ দেয় বিজেপি সমুদ্রে। মরে যাবে। আমি বলছি, দায়িত্ব নিয়ে। আমি সৌগত রায়। তিনবার আপনারা আমায় জিতিয়েছেন।’প্রথম থেকেই শুভেন্দুর ‘মানভঞ্জন’-এ সক্রিয় ছিলেন সৌগত। তিন দফায় শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ফোনে শুভেন্দুর বাবা তথা পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তৃতীয় দফায় গত মঙ্গলবারের বৈঠকে শুভেন্দুর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে সামনা-সামনি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। সেদিন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন শুভেন্দু। বৈঠকের পর দৃঢ়ভাবে সৌগত জানিয়েছিলেন, সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। তৃণমূলেই থাকছেন শুভেন্দু।কিন্তু ১৪ ঘণ্টা পরে সেই আপসে জল ঢেলে দেয় শুভেন্দুর হোয়্যাটসঅ্যাপ। সৌগতকে জানিয়ে দেন, তাঁর পক্ষে একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়। পালটা উত্তর দেন সৌগতও। সূ্ত্রের খবর, দলের অন্দরে মমতাও জানিয়েছেন, শুভেন্দু এখন ‘ক্লোজড’ চ্যাপ্টার। অর্থাৎ দলের তরফে বাড়তি কোনও চেষ্টা করা হবে না। শুভেন্দু এখনও তৃণমূলে থাকলে চাইলে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে বলে সূত্রের খবর।তারইমধ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে সৌগত কার্যত স্পষ্ট করে দেন, শুভেন্দু নিয়ে যাবতীয় আশা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। দমদমের সাংসদ বলেন, ‘শুভেন্দু আমাদের পার্টির ভালো নেতা ছিল।...তাঁর কিছু ক্ষোভ হয়েছে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলাম, আমায় সুযোগ দিন। আমি ওকে বোঝাব গিয়ে। ওকে বুঝেয়িছি। অভিষেকের সঙ্গে যদি গন্ডগোল থাকে, অভিষেকের সঙ্গে বসিয়েছি। যদি পিকের (প্রশান্ত কিশোর) সঙ্গে গন্ডগোল থাকে, পিকের সঙ্গে বসিয়েছি। কিন্তু এরপরও যদি শুভেন্দু বলে য়ে মেটাব না এবং ও যদি বিজেপিতে যায়, আর কী করার থাকবে। ওর মুখদর্শন করব না।'বর্ষীয়ান সাংসদ জানান, শুধু শুভেন্দু নয়, তৃণমূলের যে কোনও কর্মী মনে ‘ক্ষোভ’ তৈরি হলে তাঁদের ‘মানভঞ্জন’ করতে রাজি আছেন তিনি। সৌগতের কথায়, 'তৃণমূলের যে কোনও কর্মীর মনে যদি দুঃথ থাকে, পার্টি ছাড়তে চায়, যতক্ষণ সে পার্টিতে আছে, আমি তার বাড়িতে চলে যাব। ভাই পার্টি ছাড়িস না। বাবা-সোনা, পার্টিতে থাক বল। কিন্তু যখন পার্টি ছেড়ে দেবে, তখন তার মুখদর্শন করব না।'