'চড়াম-চড়াম', 'গুড়-বাতাসা'! বছর কয়েক আগেও বাংলার রাজনীতিতে এই শব্দগুলো ছিল বহুপ্রচলিত। সৌজন্যে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল।গরুপাচার মামলায় প্রায় দু'বছর জেলবন্দি থাকতে হয়েছে তাঁকে। প্রথমে আসানসোলে, পরে দিল্লির তিহাড়ে। সদ্য জামিনে মুক্ত হওয়ার পর নিজভূমে ফিরেছেন অনুব্রত। ফেরার পর থেকেই ছিলেন চুপচাপ। মুখ খুললেন বৃহস্পতির রাতে, সাংবাদিক সম্মেলনে।কিন্তু, এই দু'বছরেই যেন অনেকটা বদলে গিয়েছেন তিনি! অন্তত এদিনের প্রাথমিক দর্শনে তেমনটাই মনে হতে পারে। কোনও বিতর্কিত মন্তব্য নয়, কোনও আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক বার্তা নয়।বরং, অনুব্রত বললেন, সকলকে নিয়ে চলার কথা, সকলের ভালো থাকার কথা, শান্তির কথা। এমনকী, বন্যা দুর্গত বাংলার মঙ্গল কামনায় মা দুর্গার কাছে প্রার্থনা করলেন তিনি!তাঁর এহেন আচরণ দেখে রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, তিহাড় ফেরত অনুব্রত যত না 'বীরভূমের বাঘ', তার থেকে অনেক বেশি একজন স্নেহশীল ও ব্যথিত পিতা!কারণ, এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে একমাত্র সন্তান সুকন্য়ার প্রসঙ্গ উঠতেই আবেগ চেপে রাখতে পারেননি অনুব্রত। তাঁর গলায় ধরা পড়েছে আক্ষেপ। গরুপাচার মামলায় অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মণ্ডলকেও দীর্ঘদিন জেলবন্দি থাকতে হয়েছে। প্রায় ১৬ মাস হাজতে ছিলেন তিনি।সন্তানের এই হাজতবাস তাঁকে যে ভীষণ যন্ত্রণা দিয়েছে, তা অনুব্রতের আচরণে একেবারেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই জন্যই কি এতটা 'বদলে' গেলেন তিনি? জেল থেকে ফিরে নিজের প্রথম সাংবাদিক বৈঠকে বারবার দিলেন শান্তির বার্তা, সকলকে নিয়ে চলার বার্তা, সকলকে ভালো রাখার বার্তা?প্রসঙ্গত, ঘরে ফেরার পর থেকেই শোনা যাচ্ছে, অনুব্রত মণ্ডলের স্বাস্থ্য খুব একটা ভালো নেই। জেলে থাকাকালীন ওজন অনেকটাই কমেছে তাঁর। সেই কারণেই কোনও সমস্যা হয়েছে, নাকি অন্য কিছু, সেটা অবশ্য স্পষ্ট নয়। সূত্রের খবর, শীঘ্রই কলকাতা আসবেন তিনি। মূলত চিকিৎসা করাতেই আসবেন।এদিকে, অনুব্রত মণ্ডল ফেরায় তাঁর অনুগামীদের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছিল। কিন্তু, বৃহস্পতিবার যে অনুব্রত মণ্ডলকে সারা বাংলা তথা সমগ্র রাজনৈতিক মহল দেখল, তাঁর মধ্যে উচ্ছ্বাসের লেশমাত্র ছিল না। বরং, সেই তুলনায় অনেক বেশি ছিল আক্ষেপ আর বিষাদ।এদিন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, 'ঈশ্বরের কাছে আমি যদি কোনও অপরাধ করি, সেই পাপের শাস্তি আমি পেয়েছি!' এহেন মন্তব্য কি আদৌ 'কেষ্টসুলভ'? কাটাছেঁড়া শুরু হয়ে গিয়েছে তা নিয়েও।