একশ দিনের কাজ প্রকল্পে কেন্দ্রের বকেয়া টাকা এখনও মেলেনি। বকেয়া টাকা দাবিতে ইতিমধ্যেই নতুন করে আন্দোলন শুরু করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ সবের মধ্যেই আবার রাজ্য সরকারের দাবি, প্রকল্প বন্ধ থাকায় বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করতে গিয়ে সম পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে নিজস্ব তহবিল থেকে। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, একশ দিনের কাজ প্রকল্পে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সম পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করতে।আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী নবান্নের দাবি, ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ৫৬টি দফতর ৬০ হাজার ৫৪৫টি প্রকল্পে প্রায় ৮১ লক্ষ ৫১ হাজার জব কার্ড থাকা শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়েছে। মজুরি বাবদ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৭১৪৬ কোটি টাকা। এক-এক জন শ্রমিককে গড়ে ৩৯ দিন করে কাজ দেওয়া হয়েছে।কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর। তারা ২৬০০ টি প্রকল্পে প্রায় ২৮ লক্ষ শ্রমিককে কাজ দিয়েছে। মজুরি দেওয়া হয়েছে ২৩৫৮ লক্ষ। সেই পঞ্চায়েত দফতর ৩৪ হাজার ৭৯২টি প্রকল্পে কাজ দিয়েছে প্রায় ২২ লক্ষ শ্রমিককে। মজুরি দেওয়া হয়েছে ২১৭৭ কোটি টাকা।অন্যদিকে পূর্ত দফতর ৯৬১টি প্রকল্পে প্রায় ১৯.৪৮ লক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করেছিল। মজুরি বাবদ শ্রমিকদের হয়েছে প্রায় ১৩২৭ কোটি টাকা।কিন্তু সরকারের এই তথ্য কতটা তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছে শ্রমিক সংগঠন ক্ষেত মজুর সমিতি। রাজ্যের ১২ টি জেলায় সংগঠনটির কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তাদের দাবি, এই তথ্য সঠিক নয়। সম্প্রতি পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে তারা এই একটি ডেপুটেশনও দিয়েছে।২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, এক দিনের কাজে বিকল্প হিসাবে 'খেলা হবে' প্রকল্পের। সংগঠনটির অভিযোগ, অক্টোবর মাসের প্রথম দু'সপ্তাহে পুরুলিয়ার ৭১৪ জন সেই প্রকল্পে কাজের জন্য আবেদন করতে গেলে প্রশাসন ফিরিয়ে দেয়। জানানো হয়, এখনও তাঁরা নবান্ন থেকে সবুজ সংকেত পাননি।সংগঠনটির আরও অভিযোগ, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে পুরুলিয়া জেলার ৫.৫১ লক্ষ শ্রমিকের জব কার্ড ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। যারা এখনও জীবিত তাদের মৃত বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। আবার যাঁরা কাজ করতে ইচ্ছুক তাঁদের অনিচ্ছুক বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংগঠনটি।যদিও রাজ্য প্রশাসনের দাবি, পরিকল্পনা করে জব কার্ড হোল্ডারদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। বিকল্প হিসাবে শুধু সম্পদ বা পরিকাঠামো তৈরিই নয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজে লাগানো হচ্ছে শ্রমিকদের। নবান্নের দাবি, এইভাবে এক জন শ্রমিককে গড়ে ৩৯ দিন করে কাজ দেওয়া হয়েছে।এ প্রসঙ্গে খেতমজুর সমিতির মুখপাত্র অনুরাধা তলোয়ার হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, ‘পরিকাঠামো হোক বা রক্ষণাবেক্ষণ, ষখন কোনও কনট্রাক্টর কাজের দায়িত্ব পান তাকে বলা হচ্ছে জব কার্ড হোল্ডারদের দিয়ে কাজ করাতে। তিনি শ্রমিক হিসাবে বেশির ভাগ জব কার্ড হোল্ডারদের কাজে নিচ্ছেন। এই ভাবে নথিতে দেখানো হচ্ছে একশ দিনের শ্রমিকদের বিকল্প কাজ দেওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট কোনও পদ্ধতি মেনে তাদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। ’ এই পদ্ধতিকে বিকল্প বলা যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, কন্ট্রাকটার তাঁর পছন্দ মতো এলাকা থেকে শ্রমিক এনে কাজ করাচ্ছে। যেমন মুর্শিদাবাদ থেকে শ্রমিক এনে পুরুলিয়ায় কাজ করাচ্ছেন, আবার পুরুলিয়ার শ্রমিককে অন্যত্র। বছর পেরোলেই লোকসভা নির্বাচন। কেন্দ্রের বঞ্চনা বিরুদ্ধে প্রচার আরও জোরালো করার পাশাপাশি বিকল্প কাজ দেওয়ার খরচকেও সামনে আনবে শাসকদল।