করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন হাসপাতালের বহু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকার সত্ত্বেও রোগীকে বাঁচাতে পিছপা হলেন না-সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এই আবহের মধ্যেও রোগীর ডিম্বাশয় থেকে ১২ কেজি ওজনের টিউমার অস্ত্রোপচার করে নজির গড়লেন কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ ও জেএনএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এই ধরনের ঝুঁকির অস্ত্রোপচার করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তাঁরা।হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সরকারি হাসপাতালের ৩৬ জন চিকিৎসক-সহ প্রায় ১৪০ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। স্বল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে কালঘাম ছুটছে বাকি চিকিৎসকদের। হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এই সফল অস্ত্রোপচারে হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসক অভিজিৎ হালদারের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেছেন। ২ ঘণ্টায় এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, এই জটিল অস্ত্রোপচারের পর এখন অনেকটাই সুস্থ রয়েছেন ওই রোগী।অস্ত্রোপচার শেষে চিকিৎসক অভিজিৎ হালদার বলেন, 'ওই মহিলার দু'টো ডিম্বাশয় নষ্ট ছিল। তার সত্ত্বেও বাচ্চা কীভাবে এল, এটাই আশ্চর্যের বিষয়। আমরা আশা করছি, এই অস্ত্রোপচারের পর রোগীর একটা ডিম্বাশয় না-থাকলেও ভবিষ্যতে তিনি ভালো থাকবেন।'অন্যদিকে, হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, 'ঝুঁকিপূর্ণ এই অস্ত্রোপচার সাফল্য লাভ করায় এটা আমাদের কাছে একটা বড় উপলব্ধি। এর জন্য পুরো টিমের অবদান রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের অনেক চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল স্টুডেন্ট ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও রোগীদের ফিরিয়ে না দিয়ে আমরা যথাসাধ্য পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।' জানা গিয়েছে, ১৯ বছর বয়সী রানাঘাটের বাসিন্দা এক মহিলা প্রসব বেদনা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। তারপর ১ কেজি ৭০০ গ্রাম ওজনের একটি সন্তান প্রসব করেন তিনি। তার পর সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে বাড়িও ফিরে যান। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই পরিবারের লোকেরা খেয়াল করেন, ওই মহিলার পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে রয়েছে। এরপর সেখানে চিকিৎসক মেয়েটির নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁর ডিম্বাশয়ে টিউমার ধরা পড়ে। এরপরেই তাঁর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠলে দ্রুত অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকেরা। বুধবার সন্ধ্যায় ওই রোগিণীর ডিম্বাশয়ে অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। তাঁর বাঁদিকের ডিম্বাশয় থেকে ৩০ সেন্টিমিটার মাপের প্রায় ১২ কেজি ওজনের টিউমারটিকে বের করা হয়। এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচার করে সাধারণ মানুষকে উপযুক্ত পরিষেবা দিতে পেরে আপ্লুত চিকিৎসকরা।