কিছু একটা করে দেখাতে হবে। তাও একটু আলাদা ধাঁচে। এই জেদেরুপর ভর করেই কলকাতা থেকে রিকশা চালিয়ে সিয়াচেনের পথে বেরিয়ে পড়লেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুকুর থানার সাউথ গড়িয়ার বাসিন্দা সত্যেন দাস। ১ অগষ্ট থেকে যাত্রা শুরু করেছেন তিনি। অসম্ভবকে সম্ভব করতে চাই মনোবল ও ইচ্ছাশক্তি। তাই ইচ্ছাশক্তি ও মনোবলকে পাথেয় করে অসাধ্য সাধন করার লক্ষ্য নিয়েছেন সত্যেনবাবু। পয়লা অগষ্ট তার যাত্রা শুরু হয় নিউটাউনের বাবলাতলার বাইকার ব্রাদার্স গ্রুপের পক্ষ থেকে।সেখানে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়–সহ অন্যান্যরা তার যাত্রার সূচনা করেন। এই প্রথম নয়, প্রকৃতির টানে ও যুবসমাজকে বার্তা দিতে আগেও রিকশা চালিয়ে সত্যেনবাবু গিয়েছেন পাহাড়ে। এবারের যাত্রা সফল হলে তাঁর হ্যাট্রিক হবে। বর্ধমান শহরের উল্লাসমোড়ের উপর থেকে সত্যেনবাবু যাওয়ার সময় জানান, ২০১৪ সালে তিনি প্রথম ঠিক করেন লাদাখ যাবার। তার ইচ্ছার কথা শুনে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন, সহকর্মীদের অনেকেই প্রকাশ্যে উপহাস করেছিলেন। কিন্তু তাদের কটাক্ষে কর্ণপাত করেননি তিনি। জেদ আর অদম্য ইচ্ছার উপর নির্ভর করে সেদিন তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন। সেবার তিনি রিক্সা চালিয়ে কলকাতা থেকে বিশ্বশান্তির বার্তা নিয়ে শ্রীনগর হয়ে লাদাখের খারটুংলা পাস পর্যন্ত গিয়েছিলেন। যা এক অনন্য অভিজ্ঞতা।তখন খারটুংলা পাস, বিশ্বের সব থেকে উচ্চ গাড়ি চলাচলের রাস্তা ছিল, উচ্চতা প্রায় ১৮ হাজার ৩৮০ ফিট। দ্বিতীয়বার, মানালি হয়ে লাদাখ গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। এবার গ্লোবাল ওয়ার্মিং, সেভ ওয়াটার এবং সেভ আর্থের বার্তা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক পরার আবেদন নিয়ে সিয়াচিনের পথে রওনা দিয়েছেন তিনি। পাহাড়ের প্রতি নিছক ভালবাসা ও টান ছাড়াও যুব সমাজকে ইচ্ছাশক্তির পাঠ পড়ানোও উদ্দেশ্য রয়েছে সত্যেনবাবুর। সত্যেনবাবুর কথায়, ‘এখন যুব সমাজে যেটা অভাব রয়েছে সেটা হল ইচ্ছাশক্তির। তাই অসাধ্য সাধন করে তাদের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। যাতে আজকের প্রজন্ম গড্ডালিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে ব্যাতিক্রম কিছু করার চেষ্টা করে।’উল্লেখ্য, ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে লাদাখ যাওয়ার তার রেকর্ড ভাঙতে পারেনি কেউ। প্রথম অসুবিধা হলেও এখন অনেকটাই সাবলীল তিনি। তার নাম আর অপরিচিত নয় মানুষের কাছে, অনেকেই কুর্ণিশ করে তার কর্মকাণ্ডকে।পথেই জুটে যায় দু’মুঠো খাবার। রিকশায় রাখা থাকে রান্নার সরঞ্জাম। যেখানে খাবারের কোন ব্যবস্থা থাকে না, সেখানে নিজেই রান্নার ব্যবস্থা করে নেন তিনি। এখন তাঁকে আর উপহাস করে না কেউ। যাঁরা বিদ্রুপ করেছিল, আজ তাঁরাই সাফল্য কামনা করেন। একজন সামান্য রিকশাওয়ালাই আজ অসামান্য কাজ করে দেখাচ্ছেন।