তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস। আর তারপর থেকেই বিজেপিতে ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়। যা তরান্বিত হয়েছে মুকুল রায়ের তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। আর সেই সূত্রেই এবার আলিপুরদুয়ার বিজেপি জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। আজ তৃণমূল ভবনে তাঁর হাতে দলের পতাকা তুলে দেন মুকুল রায় এবং ব্রাত্য বসু। গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা–সহ আলিপুরদুয়ারের মোট ৮ জন বিজেপি নেতা এদিন যোগ দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে।এই ঘটনার পর এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও বেশ ভালো ফল করা আলিপুরদুয়ারে বিজেপির চরম ক্ষতি হল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। আর দলবদল করে গঙ্গাপ্রসাদ নিশানা করেছেন বিজেপি নেতৃত্বকেই। তিনি বলেন, ‘জেলার নেতাদেরকে কখনই গুরুত্ব দেয় না বিজেপি। নির্বাচনের আগে কাজ করলাম আমরা, আর আমারাই কোনও গুরুত্ব পেলাম না। নির্বাচনের আগেই দলবদল করতে পারতাম। কিন্তু তা করলে আমাকে গদ্দার বলা হত। আমি দলকে পাঁচটা আসন দিয়েছি। তারপর ফিরেছি। কিন্তু বিজেপি জেলার নেতাদের গুরুত্বই দেয় না। তাই দল ছেড়ে দিলাম।’দীর্ঘদিন ধরেই আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আলিপুরদুয়ারের বিজেপির জেলা সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। তারপরই লোকসভায় ভাল ফল করে বিজেপি। একুশের নির্বাচনেও গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার জোরেই আলিপুরদুয়ারের ৫টি আসন বিজেপির দখলে রয়েছে বলেই মত অনেকের। আর এই যোগদানের পর মুখ খুললেন মুকুল রায়। তিনি বলেন, ‘এটা শেষের শুরু। বিজেপি যেখানে নিজেদের শক্তিশালী বলে দাবি করছে, সেই উত্তরবঙ্গ থেকেই আগে ভাঙন ধরল ওই দলে। এরপর আরও দেখবেন।’উত্তরবঙ্গে সংগঠন শক্তিশালী করার দায়িত্ব তাঁর উপরই দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তারপরই ফের ম্যাজিক দেখালেন মুকুল রায়। তবে এটা নাকি ট্রেলার মাত্র। তাই যদি হয় তাহলে গোটা ব্যাপারটি যা ঘটতে চলেছে তাতে উত্তরবঙ্গে বিজেপিকে ধরাশায়ী হয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক কুশীলবরা। এদিন গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা যিনি চিফ হুইপ হয়েছেন তিনি বিরোধী দলনেতা হওয়ার যোগ্য।’ অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারী এই পদের যোগ্য নয় বলেই কার্যত বুঝিয়ে দিলেন তিনি।উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্য কিংবা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ার পক্ষে আওয়াজ তুলেছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ জন বার্লা। দলবদলের সঙ্গে সঙ্গেই সাংসদ জন বার্লাকে তুলোধোনা করেছেন গঙ্গাপ্রসাদ। তাঁর কথায়, তিনি কোনও কাজ করেননি। গঙ্গাপ্রসাদের দলবদল নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আমরা আরও বড় গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা তৈরি করব।’ এই মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন গঙ্গাপ্রসাদ। তিনি বলেন, ‘শুভেন্দুবাবু তো পদের লোভেই দলে এসেছেন। বিধানসভার টিকিট না দিলে, বিরোধী দলনেতা না করলে তিনি কি বিজেপিতে থাকবেন? এই তো দলে এলেন। বড় বড় কথা বলছেন এখন।’