স্ত্রী তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেওয়ার পরপরই তাঁর সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। ২০১৯–এর লোকসভা ভোটে সৌমিত্রকে বিষ্ণুপুরে জেতানোর অন্যতম কারিগর সুজাতা মণ্ডল খাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রীতিমতো চোখের জলে এ কথা জানান সৌমিত্র খাঁ।তিনি এদিন সুজাতার উদ্দেশে বলেন, ‘যে মানুষ ১০টা বছর সুজাতা বলতে পাগল ছিল, সেই মানুষটার কথা না শুনে তুমি এই জায়গায় এলে। আজ তোমায় সম্পূর্ণভাবে খাঁ পদবি থেকে আমি মুক্তি দিচ্ছি। তোমায় সম্পূর্ণভাবে সৌমিত্র খাঁয়ের নাম থেকে মুক্তি দিচ্ছি। এবার থেকে সুজাতা মণ্ডল লিখো, খাঁ পদবি লিখবে না। এটা আমার বংশ, জাতির পরিচয়।’এদিন সাংবাদিক বৈঠকে দীর্ঘ ১০ বছরের সম্পর্ক শেষ হওয়ার পিছনে তৃণমূলকে দোষারোপ করেন সৌমিত্র। তাঁর অভিযোগ, ‘বিজেপি–তে স্বামী–স্ত্রী কখনও পদ পেতে পারে না। এটাই এই দলের নিয়ম। কিন্তু সুজাতাকে ভুলিয়ে নিয়ে গেল তৃণমূল। সৌগত রায়রা আমার সংসার ভেঙে দিল।’ এতকিছুর পরও এদিন স্ত্রীর মঙ্গল কামনা করেছেন সৌমিত্র। রাজ্যের শাসকদলের কাছে তাঁর অনুরোধ, ‘দয়া করে সুজাতাকে খুন করে দেবেন না। ওঁর সমস্ত নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবেন।’১০ বছরের সম্পর্ক যে রাজনীতিগতভাবে শেষ হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি বলে এদিন জানান সৌমিত্র। ভাঙা গলা এবং চোখে জল নিয়ে এতদিনের সম্পর্কের কথা বলছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘২০১১–র ২১ নভেম্বর আমাদের প্রেমপর্ব শুরু হয়েছিল। যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি–তে গিয়েছিলাম তখন অনেককে পাশে পাইনি। কিন্তু সুজাতা আমার পাশে ছিল। এটা আমি কোনওদিন অস্বীকার করিনি। আজও করছি না।’ অবশ্য সম্প্রতি সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। সৌমিত্রর কথায়, ‘সুজাতার সঙ্গে রাগ–অভিমান হয়েছে। তিনমাস ঝগড়া চলছিল। ১৫–২০ দিন সেভাবে কথা হয়নি। ফেসবুক বা হোয়াট্সঅ্যাপেও কোনও কথা হয়নি।’সৌমিত্র খাঁ এদিন তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, ‘তোমার চাকরি যেদিন চলে গিয়েছিল সেদিন আমি বলেছিলাম যে আমার বেতনের অর্ধেক টাকা আমি তোমায় দেব। তোমায় না জানিয়ে আমি ৭০ হাজার টাকা তোমার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিতাম। যাতে তোমার কখনও কষ্ট না হয়।’ সৌমিত্রর আক্ষেপ, আজ রাজনীতির বেড়াজালে পড়ে গিয়েছেন সুজাতা। তাঁর কাছে বিজেপি সাংসদের প্রশ্ন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তোমার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। আজ অভিষেকের দলেই তুমি গেলে? আমি কি খুব খারাপ? আমি কি পাপী?’সাংবাদিক বৈঠকের শেষে সৌমিত্র বলেন, ‘আজ পর্যন্ত অন্য কোনও মহিলার সঙ্গে জড়িত হইনি। সুজাতা তুমি যা সিদ্ধান্ত নিয়েছ তাতে আমি বাধা দিচ্ছি না। সুজাতা তোমাকে আমি ডিভোর্স নোটিশ পাঠাচ্ছি। দেশের জন্য আর তৃণমূলে তোমার যোগদানের বিরোধীতা করে তোমার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক আমি ত্যাগ করলাম। সুজাতা তুমি ভাল থেকো।’