মুকুল রায় এখন বিজেপি’র সর্বভারতীয় সহ সভাপতি। রাজ্য বিজেপি’র অন্দরে তাঁকে নিয়ে আড়াআড়ি গোষ্ঠী থাকলেও কলকাতার বুকে দাঁড়িয়ে কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছিলেন, একুশের ভোটে মুকুলই প্রধান কারিগর। এবার তা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। সাধারণত বিজেপি’র কেন্দ্রীয় পদাধিকারীদের নিজেদের রাজ্যে বড় দায়িত্বে রাখা হয় না। তবে সহ সভাপতি হিসাবে মুকুলবাবুর কী দায়িত্ব হবে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত তা নির্দিষ্ট করেনি। তাই মনে করা হচ্ছে, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে এই রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় কাজে লাগানো হবে।মুকুল রায় অতীতে হাতে–কলমে অনেকগুলি নির্বাচন সামলেছেন। তৃণমূলকে একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের মাস্টার ম্যানেজার বলে রাজ্য–রাজনীতিতে একটা পরিচিতি আছে। বিজেপি সেটা ভালরকম টের পেয়েছে লোকসভা নির্বাচনে। মুকুলের ক্যারিশ্মা সেখানে কাজ করেছিল। বিজেপি সূত্রে খবর, সেই ক্যারিশ্মাকে দলীয় নেতৃত্ব কাজে লাগাতে চান। মুকুলবাবু তৃণমূলের অন্দরমহল সম্পর্কে অভিজ্ঞ বলে বিজেপি মনে করে। বিধানসভা ভোটের আগে তাঁকে তৃণমূল ভাঙানোর কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনা বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আছে। লোকসভা নির্বাচনের আগেও তৃণমূলে থাকা সৌমিত্র খান, অনুপম হাজরা, অর্জুন সিং থেকে শুরু করে সিপিএমের খগেন মুর্মু পর্যন্ত অনেককেই মুকুলবাবুর সাজানো ছকে বিজেপিতে যোগ দিতে দেখা গিয়েছিল। আর সেই ফসল ঘরে তুলতে পেরেছিলেন তিনি।এবার সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের এক হেভিওয়েট মন্ত্রীর নাম। সরকারে এবং সংগঠনে বহু দায়িত্বে থাকা ওই নেতা শাসক শিবিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে চলেছেন। তৃণমূল নেতৃত্বও এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে যে, ওই নেতার শিবির বদল এখন সময়ের অপেক্ষা। তৃণমূলের এক প্রথমসারির নেতা বলেন, ‘আমাদের দলে বিশ্বাসঘাতকদের স্থান নেই। তাঁরা যত দ্রুত চলে যান, তৃণমূলের পক্ষে ততই মঙ্গল।’তবে এই প্রসঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘মুকুলদার শক্তি বাড়ল কিনা, সেটা ওঁর কাছেই জেনে নিন। আমরা সঙ্ঘের (আরএসএস) লোক। যখন যে দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেটাই পালন করি।’ এই মন্তব্য যে গোঁসা করেই তিনি করেছেন তা মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কারণ মুকুল বনাম দিলীপের আড়াআড়ি গোষ্ঠী রয়েছে। তাঁরা নিজেরাও একে অপরের ছায়া মারান না। সেখানে ২০২১ সালের নির্বাচনে এই বিভাজন রেখে মুকুলকে দিয়ে কিভাবে মাস্টারস্ট্রোক কেন্দ্রীয় নেতারা করাতে পারেন এখন সেটাই দেখার।