কেন্দ্রীয় পদাধিকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করার পরে ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির দলীয় কোন্দল। তার জেরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা দিল বিক্ষিপ্ত হিংসাত্মক ঘটনা।রবিবার জেলায় জেলায় পুরনো ও নতুন বিজেপি কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে মারামারি ও ভাঙচুরের বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। বসিরহাট, বারুইপুর এবং বাঁকুড়ায় এ দিন দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল সংঘর্ষ বাধে। বসিরহাটে জেলা স্তরের বৈঠকের মাঝেই চড়াও হয়ে জেলা সভাপতি তারক ঘোষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান শতাধিক কর্মী। তাঁদের অভিযোগ, দলের পুরনো কর্মীদের বদলে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তৃণমূল ও অন্যান্য দল থেকে আসা নবাগত নেতা-সদস্যদের। বাকবিতণ্ডা ক্রমে দুই পক্ষের ধস্তাধস্তিতে গড়ায়। বেশ কিছু চেয়ার ভেঙেছে বলেও জানা গিয়েছে।বাংলা বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নানান কথা হাওয়ায় ভাসছিল। তবে গত শনিবার কেন্দ্রীয় পদ খুইয়ে রাহুল সিনহার বিস্ফোরক মন্তব্যে সেই ছবির অনেকটাই পরিষ্কার হয়। রাহুল বলেছিলেন, ‘চল্লিশ বছর বিজেপির সেবা করেছি। দলের একজন সৈনিক হিসাবে কাজ করে এসেছি। জন্মলগ্ন থেকে বিজেপির সেবা করার পুরস্কার এটাই। তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আসছে সেজন্য আমাকে সরতে হবে। এর থেকে বড় দুর্ভাগ্য হতে পারে না।’সম্প্রতি রাহুল সিনহার পরিবর্তে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরাকে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়েছে মুকুল রায়কে। যদিও নতুন দায়িত্ব তাঁর কাছে এখনও স্পষ্ট হয়নি বলে জানিয়েছেন মুকুল। সেই সঙ্গে রাজ্যের মানুষের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কথাও তুলেছেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা। আগামী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর ভূমিকার উপরে অনেকটাই আস্থা রাখছে বিদজেপি থিংকট্যাঙ্ক। রবিবার বারুইপুরে বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব জেলার বৈঠকে ছিলেন দলের নতুন কেন্দ্রীয় সম্পাদক অরবিন্দ মেনন এবং অনুপম হাজরা। সে বৈঠকেও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতি ও তার জেরে ভাঙচুর হয়েছে। বিক্ষুব্ধরা অনুপমের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান বলেও খবর। অনুপম চলে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে জোরদার সংঘর্ষ বাধে। অবস্থা এমনই দাঁড়ায় যে শেষ পর্যন্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের গড়িয়ার বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। ঘটনায় জেলা সভাপতি হরিকৃষ্ণ দত্ত অভিযোগ এনেছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক স্বরূপ দত্ত এবং মণ্ডল সভাপতি দেবোপম চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। আবার স্বরূপ জানিয়েছেন, বেঠকে ৪৫ জন মণ্ডল সভাপতিকে বাদ দেওয়ার জেরেই বিক্ষোভ দেখা দেয়। অন্য দিকে, বাঁকুড়ায় দু’জন মণ্ডল সভাপতিকে সরানো বিক্ষোভ এবং জেলা সভাপতিকে সরানোর দাবি ওঠে। যদিও জেলার সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্রর মতে, বিক্ষোভের সঙ্গে বিজেপির যোগ নেই।