এশিয়া কাপ ২০২৫-এ পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিয়ে সুনীল গাভাসকর যে মন্তব্য করেছিলেন তা ঘিরে ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট মহলে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাসকর সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিন, পাকিস্তানের এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গাভাসকর বলেছিলেন ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার কারণেই এমনটা হতে পারে। এরপরেই গাভাসকরের মন্তব্যের সমালোচনা করেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার।
পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা কে, কী বলেছেন?
জাভেদ মিয়াঁদাদ কী বলেছেন?
এই মন্তব্যের পর পাকিস্তানি ক্রিকেটমহলে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। পাকিস্তান দলের প্রাক্তন অধিনায়ক জাভেদ মিয়াঁদাদ, যিনি ব্যক্তিগতভাবে গাভাসকরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত, তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না সানি ভাই এমন কথা বলেছেন। উনি সবসময় রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছেন।’
পাকিস্তানের প্রাক্তন স্পিনার ইকবাল কাসিম কী বলেছেন?
পাকিস্তানের প্রাক্তন স্পিনার ইকবাল কাসিমও বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘গাভাসকর এমন একজন ব্যক্তি যিনি দুই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছেই প্রিয়। রাজনীতিকে খেলার মধ্যে টেনে আনা ঠিক নয়।’
তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাসিত আলি
তবে সবচেয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান বাসিত আলি। তিনি গাভাসকরের মন্তব্যকে ‘একেবারেই মূর্খের মতো মন্তব্য’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবে মন্তব্য করা দায়িত্বজ্ঞানহীন। ক্রিকেটকে রাজনৈতিক শত্রুতার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন … মোহনবাগানের আঁতুড়ঘর আজ যেন ধ্বংসস্তূপ! শ্যামবাজারের সেন বাড়ির ধ্বংসে হারাতে বসেছে শতাব্দীর ঐতিহ্য
মুস্তাক আহমেদ কী বলেছেন?
পাকিস্তানের প্রাক্তন লেগ-স্পিনার মুস্তাক আহমেদ সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘ক্রোধের বশে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। এতে পরে অনুশোচনার শিকার হতে হয়।’ তিনি পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবদানের কথা উল্লেখ করে রাজনীতিকে খেলাধুলার বাইরে রাখার আহ্বান জানান।
বিসিসিআই ও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (BCCI) স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নেবে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের অংশগ্রহণের বিষয়ে সরকারিভাবেই নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন … উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে! সম্প্রচারে বিভ্রান্তি, ওয়াইড বলের রিভিউ-তে বড় গন্ডগোল
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের ভবিষ্যত অনিশ্চিত
২০২৫ সালের এশিয়া কাপ ভারত ও শ্রীলঙ্কার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। গাভাসকরের মতে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি না হলে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (ACC)-এর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেছিলেন, ‘পরিস্থিতি যদি না বদলায়, তাহলে ACC ভেঙে যেতে পারে এবং একটি ছোট আকারের টুর্নামেন্ট হতে পারে, যেখানে হংকং, ইউএই’র মতো দলগুলো অংশ নিতে পারে।’
আরও পড়ুন … বাংলাদেশকে পিছনে ফেলে দিল আয়ারল্যান্ড! Women's Cricket T20I Rankings প্রকাশ করল ICC
বিকল্প টুর্নামেন্টের ইঙ্গিত
গাভাসকর আরও জানান, যদি ভারত এশিয়া কাপে অংশ না নেয়, তাহলে BCCI নিজেরাই একটি বহু-জাতীয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারে। সেখানে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানের মতো দলকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। এমনকি এই টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কায় হলেও, ভারতের নেতৃত্বে আয়োজিত হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
যদিও গাভাসকরের বক্তব্য অনেকের কাছে বিতর্কিত মনে হতে পারে, তবে ভারত ও পাকিস্তান রাজনৈতিক সম্পর্কের বাস্তবতা এবং সাম্প্রতিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে এশিয়া কাপ ঘিরে অনিশ্চয়তা যে বাড়ছে, তা অস্বীকার করা যায় না। পরবর্তী কয়েক মাস পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, সেটিই নির্ধারণ করবে এশিয়া কাপের ভবিষ্যত।