যদি পর্যাপ্ত পুলিশবাহিনী মোতায়েন রাখা হত, তাহলে মুর্শিদাবাদের হিংসা কখনও এত ব্যাপক আকার নিতে পারত না। হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল, কারণ - জেলায় যথেষ্ট পরিমাণে পুলিশ ছিল না। এবার তাই জেলায় জেলায় এবং সর্বত্রই পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশকর্মী মোতায়েন করার সময় এসে গিয়েছে! মুর্শিদাবাদ হিংসা সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলাকালীন এই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন।
এই শুনানি চলাকালীন আক্রান্তদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি সেন। যদিও একইসঙ্গে এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের তরফে যে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে,তাতে সন্তোষও প্রকাশ করেছে আদালত। অন্যদিকে আবার কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, তারা তৈরিই আছে। আদালত অনুমতি দিলেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা - এনআইএ মুর্শিদাবাদ হিংসা নিয়ে তদন্ত শুরু করে দেবে।
উল্লেখ্য, নয়া ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদের নামে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার নানা প্রান্তে - যেমন - সামশেরগঞ্জ, সুতি, জঙ্গিপুর প্রভৃতি এলাকায় হিংসার আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় তিনজনের মৃত্যুও হয়। পরবর্তীতে যা নিয়ে রাজনীতির অভিযোগও ওঠে।
প্রাথমিকভাবে এই হিংসা সামাল দিতে রীতিমতো নাকাল হতে হয় পুলিশকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসন বিএসএফের সাহায্য নেয়। পরে আদালতের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনীও মোতায়েন করা হয়। শেষমেশ বিএসএফ, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন একত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
এই গোটা ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ হল - রাজ্যের সর্বত্রই প্রয়োজনের তুলনায় কম পুলিশকর্মী রয়েছেন। এমতাবস্থায় হিংসার ঘটনা সামাল দেওয়া কঠিন। তাই এবার পুলিশবাহিনীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কর্মী নিয়োগের সময় এসেছে।
এই মামলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি পালটা যুক্তি খাড়া করেন, সারা দেশেই পুলিশের পর্যাপ্ত সংখ্যা নেই। এমনকী, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকার কারণেই পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বিচারপতি তাঁর যুক্তি মেনে নিয়েও জানান, আপাতত রাজ্য নিয়ে আলোচনা চলছে।
একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি উত্থাপন করা হলে বিচারপতি বলেন, 'ক্ষতিপূরণের যে প্রকল্প আছে, তা মেনে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রাজ্য? কারণ, আপনারা যেটাকে পর্যাপ্ত বলে মনে করছেন, সেটা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে পর্যাপ্ত বলে নাও মনে হতে পারে।' একইসঙ্গে, হিংসা পরবর্তী সময় মুর্শিদাবাদে প্রশাসন ভালো কাজ করেছে বলেও মনে করেছেন বিচারপতি সেন।
অন্যদিকে, আজ (বৃহস্পতিবার - ১৫ মে, ২০২৫) আদালতে মুর্শিদাবাদ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তার রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছে, গত ১৮ এপ্রিলই রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ডিজিকে সাবধান করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, রাজ্যের কমপক্ষে ১৫টি জায়গায় অশান্তি হতে পারে। কেন্দ্রের সম্পত্তি আক্রমণ করা হতে পারে। কেন্দ্র এনআইএ তদন্ত করাতেও প্রস্তুত বলে কলকাতা হাইকোর্টকে জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি নির্দেশ দেন, পরবর্তী কোনও নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থাকবে। আগামী ৩১ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।