উৎপল পরাশরবৃহস্পতিবার বাংলায় একদিনের সফরে ঠাসা কর্মসূচি নিয়ে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু আর তাঁর আগে ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপল্স অ্যাসোসিয়েশন’ (জিসিপিএ)–এর নেতা অনন্ত রায়ের সঙ্গে ‘ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ’ সারতে বুধবার গভীর রাতে গুয়াহাটিতে গিয়ে রাত্রিবাস করেন তিনি। রাজবংশী ভোটের কথা মাথায় রেখে বৃহস্পতিবার সকালে নিম্ন অসমের চিরাং গিয়ে অনন্ত রায়ের সঙ্গে প্রাতঃরাশ সারবেন অমিত শাহ। আর তার ঠিক পরেই তিনি আসবেন কোচবিহারে।একদিনের কর্মসূচিতে শুধু রাজবংশী ভোটই নয়, মতুয়াদের ভোটব্যাঙ্ককেও পাখির চোখ করে কর্মসূচি নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিন সকালে কোচবিহার থেকে বিজেপি–র চতুর্থ ‘পরিবর্তন যাত্রা’র সূচনা করে তিনি আসবেন মতুয়া–গড় ঠাকুরনগরে। সেখানে জনসভা রয়েছে তাঁর। উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অসমেও দরজায় কড়া নাড়ছে বিধানসভা নির্বাচন। বৃহস্পতিবারের সফরে তাই দুটি রাজ্যকেই সময় দিচ্ছেন অমিত শাহ। আস্থা অর্জন করতে চাইছেন মতুয়া ও রাজবংশীদের। অসমে বিজেপি–র মুখপাত্র রূপম গোস্বামী বলেন, ‘বুধবার রাতে গুয়াহাটিতে আসবেন অমিত শাহ। একটি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ সারতে বৃহস্পতিবার চিরাংয়ে যাবেন তিনি। এবং দিনের শেষে দিল্লি ফিরে যাবেন। এর থেকে বেশি তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ উল্লেখ্য, একাধিক রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা–থাকা ‘ফেরার’ অনন্ত রায়কে ১৯৯৮ সালে ‘মহারাজা’ খেতাব দেওয়া হয় জিসিপিএ–র পক্ষ থেকে। চিরাংয়ের সতীপুর গ্রামে তাঁর বাসস্থানও কোনও রাজমহলের কম কিছু নয়।১৯৪৯ সালের ২৮ অগস্ট কোচবিহারের কোচ–রাজবংশী রাজবংশের সর্বশেষ ‘স্বাধীন’ রাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে ভারত ভুক্তির চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। সেই চুক্তি মোতাবেক ওই বছর ১২ সেপ্টেম্বর কোচবিহার ভারতের অন্তর্ভূক্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে জিসিপিএ তাদের লোকজনের জন্য পৃথক রাজ্য বা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।অসমে প্রায় সাড়ে ১৮ লক্ষ্য কোচ–রাজবংশী ভোটার এবং কোচবিহার–সহ পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জেলার ভোটারদের ওপর অনন্ত রায়ের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সূত্রের খবর, প্রাতঃরাশের টেবিলে বসেই অনন্ত রায়ের রাজনৈতিক সমর্থন নিজেদের ঝুলিতে ভরার চেষ্টা করবেন অমিত শাহ। তাঁর সঙ্গে থাকবেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং প্রবীণ মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা।মঙ্গলবার শাহি সাক্ষাতের ব্যাপারে অনন্ত রায় বলেন, ‘জলখাবার সারতে আমার বাড়ি আসছেন অমিত শাহ। আমরা খুবই খুশি। আমরা তাঁকে ঐতিহ্যবাহী কোচ–রাজবংশী খাবার পরিবেশন করব এবং রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করব।’ অসমের যে ছয়টি সম্প্রদায় তফসিলি জাতিভুক্ত হতে চাইছে অর্থাৎ এসটি মর্যাদার দাবি করছে তাদের মধ্যে অন্যতম কোচ–রাজবংশী সম্প্রদায়। ইতিমধ্যে বিজেপি এই দাবি পূর্ণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই এই কাজ কতদূর এগোল সেই কথা অমিত শাহর সঙ্গে আলোচনায় জানার চেষ্টা করবেন অনন্ত রায়।