একবার, দুবার, তিনবার, চারবার, পাঁচবার,….ছবার, সাতবার ঘর ভেঙেছে। ভিটে বাড়ি সব খেয়ে নিয়েছে গঙ্গা। তাতে কি হয়েছে? পাশে কেউ নেই। তবু আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মালদার গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা। বার বার গঙ্গা এসে খেয়ে নিয়েছে ভিটে মাটি যা ছিল সবটা। বার বার ভিটে ছাড়া হয়েছেন তাঁরা। স্কুল, পঞ্চায়েত, মন্দির, মসজিদ, বিঘার পর বিঘা চাষের জমি সব হারিয়ে গিয়েছে গঙ্গাগর্ভে। কিন্তু তারপরেও ফের নতুন করে বাঁচার স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেছেন হাজার হাজার মানুষ। ভোট এসেছে দেশ জুড়ে। লোকসভা ভোট। মালদা, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারও চলছে পুরোদমে। কিন্তু প্রচারের সেই আলো থেকে অনেক অনেক দূরে রাত কাটাচ্ছেন ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা। মালদার ভাঙন কবলিত সেই এলাকার মানুষদের সম্পর্কে খোঁজ নিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। নেতারা আসেন? গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে উদাস চোখে তাকিয়ে ছিলেন সিংপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ রহিমুদ্দিন। প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেলেন তিনি। বলেন, ভোট এসেছে। এখন তো আসবেই। কিন্তু ওদের আশায় আর বসে থাকি না। ঘর চলে গিয়েছে গঙ্গাগর্ভে। আবার নতুন করে তৈরি করেছি। চর জেগে উঠেছে গঙ্গার মাঝে। সেই চরে গিয়ে উঠেছেন অনেকে। জল বাড়লে চরে জল উঠেছে।আবার ভিটে ছাড়া আমরা। বছররে পর বছর ধরে এটাই আমাদের জীবন। গঙ্গার এই অংশটাতে জল যেন কেমন স্থির হয়ে আছে। তবে বর্ষাকালে এই জলই দু কূল ছাপিয়ে ওঠে। সেই সময় গঙ্গার ভয়াল রূপ যারা দেখেছেন তারাই জানেন কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে গঙ্গা। এলাকায় তৈরি হয়েছে গঙ্গা ভাঙন অ্যাকশন নাগরিক কমিটি। গঙ্গা ভাঙন রোধ করতে তাঁরা দীর্ঘ আন্দোলন করেছেন। বিভিন্ন মহলে চিঠি দিয়েছেন। আসলে কী জানেন গঙ্গা আজ সব বন্ধন মুক্ত হয়ে বইতে চাইছে। কিন্তু সেই গঙ্গাকেই আটকে দেওয়া হয়েছে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে বলে চলেন কমিটির নেতৃত্ব। ঘাটে যাওয়ার রাস্তার মোড়েই পুলিশের নাকা চেকিংয়ের বুথ। সতর্ক নজরদারি পুলিশের। এদিক-ওদিক রাজনৈতিক দলের পতাকা চোখে পড়ে। ফিরে আসছিলাম। রাজনৈতিক দলের প্রচার চলছে। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে কানে বাজছে সেই গান, ‘বিস্তীর্ণ দুপারের, অসংখ্য মানুষের হাহাকার শুনেও নিঃশব্দে নীরবে- ও গঙ্গা তুমি, গঙ্গা তুমি বইছ কেন? উন্মাদনার মন্ত্র দিয়ে লক্ষজনেরে সবল সংগ্রামী আর অগ্রগামী করে তোলো না কেন? ’