দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরই হাওড়ার তৃণমূল সংগঠন এবং হাওড়া পুরনিগমের বিদায়ী কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন বালির বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণকাজ চলছে। চুরি করছে দলের লোকজন। এগুলো আমার কথা নয়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ। সাধারণ মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না।’বৈশালীর গুরুতর অভিযোগ, ‘আমফান, লকডাউনে সাধারণ মানুষ কোনওভাবেই উপকৃত হননি। প্রাক্তন কাউন্সিলরদের কাছে ১৬০০ ত্রিপল গেছে। কিন্তু তা সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছয়নি। আমাদের কিনে দিতে হয়েছে। লকডাউনে ৩৩০০ কেজি চাল দেওয়ার কথা ছিল সাধারণ মানুষকে। তার মধ্যে ২২০০ কেজি চাল কেটে নেওয়া হল। আর ১১০০ কেজি চাল বালি, বেলুড় আর লিলুয়াতে দিতে হয়েছে।’শুক্রবার সন্ধেয় বৈশালী ডালমিয়াকে বহিষ্কার করেছে রাজ্যের শাসকদল। তখন তিনি একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের অনুষ্ঠানে। সেখানেই সঞ্চালকের মাধ্যমে তিনি বহিষ্কারের খবর জানতে পারেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘কোনও ফোন পেলাম না, চিঠি পেলাম না। টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে জানতে পারলাম। এটাই তৃণমূল!’ তাঁর আক্ষেপ, ‘টিভি–র মাধ্যমে পার্টির লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তৃণমূলে ঐক্যবদ্ধতা এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।’দলবিরোধী মন্তব্যের জেরে বৈশালীকে দল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি। সেই প্রসঙ্গে এদিন ক্ষুব্ধ বৈশাখী বলেন, ‘দলের উঁইপোকাদের যদি আমি তুলে ধরি তা হলে সেটা কি দলবিরোধী কাজ? মানুষের সেবা করা কি দলবিরোধী কাজ? মানুষজনকে খুন করে ফেলছে, আর তাদের আটকাতে গেলে তা দলবিরোধী কাজ। তা হলে দল কোথায় যাচ্ছে?’ বালির বিধায়কের অভিযোগ, ‘উঁইয়ের ঢিপিটা রয়েই গেল।’কিন্তু মূলত কার বিরুদ্ধে অভিযোগ বৈশালী ডালমিয়ার? তাঁর জবাব, ‘সবাই ছেড়ে যাচ্ছে, একজনই পড়ে থাকবে। তখনই বোঝা যাবে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ। দলের ১৬ জন কাউন্সিলর আমার বিরোধী। তাঁরা একজনকেই খুশি করতে চাইছেন যাঁর কাছ থেকে টিকিট পাওয়া যাবে। আমি বলেছিলাম, তাঁদের যেন দলের সুপ্রিমো বা শীর্ষ নেতৃত্ব টিকিটটা দেয়। তা হলে ওই কাউন্সিলরদের দায়বদ্ধতা থাকবে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি। এটা কি দলবিরোধী কথা?’হাওড়া পুরনিগমের বিদায়ী কাউন্সিলরদের প্রতি অভিযোগ এনে এদিন বৈশালী আরও বলেন, ‘লিলুয়ার রাস্তাটা দেখেছেন? ওটা রাস্তা নয়, ওটা মরণকূপ। কর্পোরেশনকে অজস্র চিঠি দেওয়া হয়েছে। কাজ হয়নি। ডাস্টবিন পরিষ্কার হয় না। কারণ, ঠিকাদাররা টাকা পান না। কর্পোরেশনের কাছে কোনও ফান্ড নেই। কারণ সেই ফান্ড বিদায়ী কাউন্সিলরদের পকেটস্থ হয়ে গিয়েছে। এই কথা বললেই বেইমানি।’এদিনই মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজভবনে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ইস্তফাপত্র দিয়ে বেরিয়ে এসে সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বৈশালী বলেন, ‘রাজীবদা কেঁদে ফেলেছেন। আমি কাঁদব না। আমি ভয় পাই না। রাজীবদা আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলেন।’ তাঁর অভিযোগ, ‘দলে কয়েকজনই দুর্ব্যবহার করছেন। আর তাঁদেরই মাথার মুকুট করে রাখা হয়েছে। এঁরা দলকে কোথায় নিয়ে যাবে তা আগামীদিনেই জানা যাবে।’বৈশালী কি দলবদল করবেন? তাঁর উত্তর, ‘আমি এখনও কিছু ভাবনি। মানুষকে পরিষেবা দিচ্ছি। কারণ মানুষের জন্যই আমি রাজনীতিতে এসেছি। সাধারণ মানুষ আমাকে বিধায়ক করেছেন। কখনও নিজের কর্তব্যে গাফিলতি করিনি। আমি সাড়ে ৪ বছরে কী কী পরিষেবা দিয়েছি তা নিয়ে একটি বই বেরোবে খুব শীঘ্রই। প্রথমে ভেবেছিলাম লিফলেট করব, তার পর ভাবলাম বুকলেট করব। দেখছি, এতদিনে যা কাজ করেছি তা বিবরণী দিতে বই প্রকাশ করাই প্রয়োজন।’