মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস টানা তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এল। এই আবহে ২০০-র স্বপ্ন দেখেও হারের স্বাদ পাওয়া বিজেপির নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠছে। অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীদের স্বপ্নের ২০০-র অঙ্ক ছোঁয়া তো যায়নি, বরং ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরের ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি করে ৯৯-এর গণ্ডিও পার করতে পারেনি বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় প্রত্যাশার উঁচু শিখর থেকে গড়িয়ে পড়ল বিজেপি নেতৃত্ব। আর এই ব্যর্থতার নেপথ্যে রয়েছে কোন কোন কারণ?২০১৯ সালের সাফল্য ধরে রাখতে একুশের ঘুঁটি সাজাতে গিয়ে বিজেপি একটু বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর। এই আবহে বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে হারেনি, বরং তারা হেরেছে ব্যক্তি মমতার ক্যারিশ্মার কাছে। এই পরিস্থিতিতে মোদী ম্যাজিকও জেতাতে পারেনি বিজেপিকে। বিজেপি যেটা বুঝতে ভুল করেছিল, তা হল, লোকসভা এবং বিধানসভা নির্বাচন এক নয়। লোকসভায় লড়াইটা মোদী বনাম মমতা ছিল। সেখানে কেন্দ্রের মোদীর বিকল্প মুখ সে অর্থে ছিল না। তবে বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি চেয়েছিল লড়াইটা হোক, মোদী বনাম মমতা। আর সেখানেই ধাক্কা খায় বিজেপি। রাজ্যে মমতার বিকল্প কোনও মুখ তুলে আনতে না পেরেই মোদীর উপর নির্ভর করতে হয়েছিল বিজেপিকে। আর রাজ্য স্তরে বিজেপির সেই নেতৃত্বহীনতার ফায়দা তুলতে সক্ষম হয় তৃণমূল এবং মমতা। রাজ্যে যে ব্র্যান্ড মমতার কোনও বিকল্প নেই, তা ফলাফলেই স্পষ্ট।এই আবহে অভিযোগ ওঠে, অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপই রাজ্যে বিজেপির হারের অন্যতম কারণ। এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির এক শীর্ষ স্থানীয় নেতা হিন্দুস্তান টাইমসের কাছে দাবি করেন, এই ব্যর্থতা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দেখানো পথে হাঁটার কারণে হয়নি। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে, এমন 'মুখ'-এর অভাব একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।এদিকে ফলাফলের পর অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী, জেপি নড্ডারা হিন্দুস্তান টাইমসের কাছে দাবি করেছেন, লোকসভার সাফল্যের নিরিখেই ২০০ আসনের লক্ষ্য স্থির করা হয়। এদিকে বিজেপির দাবি, ধর্মীয় মেরুকরণ তাদের অনেকটা আঘাত দিয়েছে। মেরুকরণের ধাক্কা সামলে উঠতে না পেরেই ১০০-র গণ্ডি ছুঁতে ব্যর্থ হয় বিজেপি। বিজেপির দাবি, চথুর্ত দফার ভোটের পর থেকেই মুসলিম ভোটের মেরুরকরণ শুরু হয়। সেই মেরুকরণের বিরুদ্ধে কোনও প্ল্যান বি ছিল না বিজেপির কাছে। আর তাতেই কাল হয় গেরুয়া শিবিরের।মুর্শিদাবাদের মতো কংগ্রেস গড়ে তৃণমূলের জয় বিজেপির হারের অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দেয়। ৫০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোটার এই জেলায়। তাছাড়ও রাজ্য জুড়ে কংগ্রেস এবং বামজোটের শোচনীয় পরিস্থিতির জেরে তৃণমূলের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে বিজেপি। তাছাড়া আদি বনাম নব্যের লড়াই, দুর্বল সংগঠনও ভুগিয়েছে বিজেপিকে। তৃণমূল ত্যাগীদের উপর ভর না করে বিজেপিকে এবার নিজেদেরে নেতা তৈরি করার দিকে নজর দিতে হবে। এদিকে অন্যান্য রাজ্যে মহিলা ভোটাররা মোদীর বড় ভরসা হলেও বাংলায় সমীকরণটা ঝুঁকেছিল মমতার দিকে। এই সব কারণগুলিকে নজরে রেখেই ২০২৬-এর লক্ষ্যে ঘর সাজাতে শুরু করবে বিজেপি।