আরজি করের ঘটনা অনেকের ক্ষেত্রেই যেন আত্মউপলব্ধি। এই যেমন ইউটিউবার বং গাই ওরফে কিরণ দত্ত জানিয়েছেন, তিনি আর নিজের কোনও ভিডিয়োতে মেয়েদের শরীর নিয়ে নোংরা মস্করা করবেন না। স্বীকার করেছেন, একসময় অনেক কিছু বলেছেন, কিছুটা 💖না বুঝেই যে ফলাফল কতটা গভীর হতে পারে। এখন থেকে সেই ভুলগুলো আর করবেন না। ‘শহর’-এর অনিন্দ্যও হাঁটলেন সেই পথেই। ফেসবুকে লম্বা পোস্টে স্ব🐭ীকার করলেন, অনেক মেয়ের গায়ে হাত তুলেছেন, মেয়েদের উপর মাতব্বরি করে নিজের পৌরুষত্ব ফলিয়েছেন, কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়েছেন… তবে তিনি জানেন সেগুলো ভুল করেছেন। আর তাই প্রকাশ্যেই ক্ষমা চাইলেন।
শহর ব্যান্ডের গায়ক অনিন্দ্য বোসকে কদিন আগেই আরজি কর নির্যাতিতার হয়ে কথা বলার সময় চোখের জল ফেলতে দেখা গিয়েছিল। এবারে তিনℱি লিখলেন, ‘দেখলাম এটাই যে আমিও ধোয়া তুলসীপাতা নই! আমার কাছের নারীদের ওপর আমার তথাকথিত 'পৌরুষ'-এর জোর কখনো না কখনো আমিও ফলিয়েছি| দূর্ব্যবহার করেছি, গায়ে হাত তুলেছি...হ্যাঁ, স্বীকার করছি... করেছি। সে আমার মা থেকে শুরু করে বোন, দিদি, মাসি, পিসি, বান্ধবী, স্ত্রী, প্রেমিকা, কন্যা... সবার সঙ্গেই।’
‘আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের এই 'পুরুষ'- দের এই সমাজে বেড়ে ওঠাটাই সেরকম! খাওয়ার পাতে মাছের বড় পিসটা, আস্ত ডিমটা, জ্ঞানত অবস্থা থেকে 'অমুকের ছেলে হয়েছে' বলে আত্মীয়স্বজনের কিম্বা পাড়া প্রতিবেশীদের উল্লাস, কন্যাসন্তান হলে কেমন জানি একটা হাফ-খুশি গোছের ভাব, ক্লাস টু-থ্রি-র মেয়েটাকে 'হাঁটু ঢেকে বোসো' গোছের অভিবাবকের রক্তচক্ষু, অথচ ওই একই বয়সে আমি যদি সব খুলে আমার ঘন্টাটি দুলিয়ে ঘুরে বেড়াই তাতে কারোর কোনও আপত্তি নেই... বড়রা খুব বেশি হলে বলবে... 'আহা,ছেলেমানুষ তো...হতেই পারে'! ছোটবেলা থেকে নারী পুরুষ নির্বিশেষে বড়দের মুখে🔥 পুরুষদের নিয়ে লব্জ একটা কথা শুনে বড় হওয়া...'হীরের আংটি, তার আবার বাঁকা ত্যাড়া!'… আমাদের মধ্যে ছোট থেকে ইনজেক্ট করে দেওয়া যে তুমি ছেলে... বহুগামিতা তুমি করতেই পারো।’, লিখেছেন গায়ক।
নিজের দোষগুলো এভাবে সামনে আনতে নিসন্দেহে অনেকটা মনের জোর লাগে। অন্যের সমালোচনা তো সবাই করে, নিজের সমালোচনা করতে পারে কজন? তবে অনিন্দ্য জানেন ভুল-ঠিক নিয়েই মানജুষ। তাই নিজেকে বদলে নেওয়া যায় যে কোনও সময়ে এসেই। তিনি তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘কোনদিন কোন মেয়ের দিকে এক মুহূর্তের জন্যেও কামুক দৃষ্টিতে তাকাই নি...? হ্যাঁ তাকিয়েছি। হ্যাঁ, পরমুহূর্তেই হয়তো সংযম দিয়ে, ভদ্রতা দিয়ে নিজের সেই প্রবৃত্তিকে প্রশমিত করেছি... কিন্তু তাকিয়েছি তো!মনে মনে কোন মহিলাকে কামনা করে স্বমেহনে (অর্থ- হস্তমৈথুন) লিপ্ত হইনি? অজস্রবার হয়েছি!’
নিজেও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে লিখেছেন গায়ক। তাঁর কথায়, ‘ছোটবেলা আমি নিজেও একাধিকবার মলেসটেড হয়েছি... আত্মীয় বা পরিজনদের হাতে...সেটাও সত্যি। তাও নিজের সেই যন্ত্রণা বা ঘিনঘিনে অভিজ্ঞতাকে আমল না দিয়ে, আজ পর্যন্ত আমার পরিচিত নারীদের সঙ💛্গে নানান মাতব্বরি এবং অসভ্যতা করার অপরাধগুলো মাথা পেতে স্বীকার করে নিলাম। আপনারা যদি এই মর্মে আমাকে তিরস্কার করেন, শাস্তি দেন, আমি মাথা পেতে নেবো। আমার এই জীবনে আজ পর্যন্ত আমি যত নারীর সঙ্গে অন্যায় করেছি, পৌরুষের দোহাই দিয়ে দূর্ব্যবহার করেছি... তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। মানুষের হয়ে এত বড় বড় ভাষণ দিচ্ছি, বিদ্রোহের কবিতা লিখছি... অথচ নিজে একবার আয়নার দিকে তাকাবো না?!!’
শুধু তাই নয়, অনিন্দ্য সবশেষে লিখেছেন এই স্বীকারক্তি তাঁকে মানসিক শান্তি দিয়েছে। যন্ত্রণা থেক🦂ে বাঁচিয়েছে। অনেকটা হালকা হতে পেরেছেন, সবটা বলতে পেরে। নয়ত🅠ো এতদিন নিজেকেই ‘ভণ্ড’ ভাবছিলেন। জানালেন এবার তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠ আরেকটু বলিষ্ঠ হবে। পুরুষ হিসেবে নয়, এই গণ আন্দোলনে পা মেলাবেন মানুষ হিসেবে।