প্রতিবারই 'ভাইফোঁটা'-র উদযাপন বেশ ঘটা করেই হয় কিংবদন্তী সঙ্গীতশিল্পী হৈমন্তী শুক্লার বাড়িতে। নিজেই ভাইয়েরা ছাড়াও প্রতিবারই দিদির ডাকে ফোঁটা নিতে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে যেতেন উস্তাদ রাশিদ খান। তবে এবার আর তিনি নেই। দিদিকে ছেড়ে ভাই রাশিদ এবার অনেক দূরে। তাই এবছরটা রাশিদের স্মৃতি আঁকড়ে নিজের বাড়িতে ভাইফোঁটার সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন হৈমন্তী শুক্লা। ভাইফোঁটার দিনে এবার বর্ষীয়ান, কিংবদন্তি শিল্পী♊কে Hindustan Times Bangla-র তরফে ফোন করতেই তাঁর গলায় ঝড়ে পড়ল একরাশ মন খারপ। ভাই রাশিদের স্মৃতিতে কাতর, পুরনো কথা মনে করেই আজকের দিনটা তাই কাটিয়ে দিতে চান তিনি।
কী বললেন হৈমন্তী শুক্লা?
রশিꦯদ (খান) তো এবার নেই, তাই এই বছরটা আমি ভাইফোঁটাও বন্ধ করে দিয়েছি। এবছর বাড়ি অন্ধকার করে রেখেছি। আমার নিজের ভাইয়েরা আছে, তবে ওর ফোঁটাটা আলাদা ছিল তো। তাই এবছর আমার বাড়িতে ভাইফোঁটার সমস্ত অনুষ্ঠানই বন্ধ। এবছরটা আলাদা। ছোট থেকে দেখতাম এই দিনে মা-এর ভাইয়েরা আসতেন, বাবার ছাত্রছাত্রীরাও আমার ভাই ছিল। এই দিনটাতে বাড়িতে বিশাল আয়োজন হত। সেই বিষয়টাই আমি আমার গলফগ্রিনের বাড়িতে তুলে এনেছিলাম।
খুব ছোট থেকেই দেখছি আমার বাড়িতে ভাইফোঁটার উৎসব বেশ ঘটা করেই পালিত হয়ে আসছে। যখন আমি বাবা-মায়ের কাছে থাকতাম, সেই তখন থেকেই…। তারপর যখন এবাড়িতে এলাম তার🍌পরও। আমার ৪টে ভাই, এখন দুজন নেই। তবে এবার আর সেটা হল না, শুধুই রাশিদের জন্য।
আসলে নিজের আপন ভাইদের থেকেও যাঁরা গানবাজনা করেন, সেই ভাইয়ের আমার কাছে বেশি আপন হয়ে গিয়েছে ধীরে ধীরে। রাশিদকে 𓂃ফোঁটা দিতাম, সেও অনেক বছর꧋ হয় গেছে। এটাই প্রথম বছর যে বছর ফোঁটায় রাশিদ আমার কাছে নেই। তাই সত্যিই মন খুব খারাপ। বাইরের লোককে এই কথাগুলো বললে হয়ত ভাববেন বাড়াবাড়ি হচ্ছে। এই অনুভূতিটা ঠিক সকলকে বোঝাতে পারব না আমি। ও আমার কাছে ভীষণ স্নেহের ছিল, নিজের ভাই-এর থেকেও বেশি। ও আমাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করত। দিদি বলে মানত। তাই ভাবলাম, এবার অন্তত নাহয় ওরজন্য নাই-ই বা করলাম ফোঁটা। এবার কাউকে ফোঁটা দিচ্ছি না। এই এখন বাড়ি অন্ধকার করে বসে আছি।
আমার ভাইদেরও সেটা জানিয়েছি। ওরাও সেটা বুঝেছে। ওদের কথায়, দিদির যখন মন খারাপ আমরাও কেউ যাব না এবার। আমাদের তো বয়স হচ্ছে, মন খারাপ হয় খুব (গলা ধরে এল…)। সব বন্ধ করে দিয়েও যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে, কিন্তু ভালোও লাগছে না। খুব ভালোবাসত ও আমায়, ফোন করলে দিদি পায়ে লাগি ,পায়ে লাগি বলত (প্রণাম নেবেন)। ও তো কꦰত বড় বড় লোকজনের সঙ্গে মিশত, অনেক বড় শিল্পী, তব যখন আমার কাছে আসত, এসব কিছুই মনে রাখত না। খুব সুন্দর স্বভাব ছিল ওর, অনেক কিছু শেখার ছিল রাশিদের থেকে। এখন ওর পরিবারের সঙ্গে অবশ্য শুধ𒀰ু হাই-হ্যালো টুকুই আছে।
আরও পড়ুন-'সারারাত পুজো চলে, খুবই জ💎াগ্রত সেই কালী, চালু আছে বলি প্🐭রথাও'
এই যে আমরা যে বলি ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা’ কিন্তু আম🦂ি এমন ফোঁটা দিতে কি পারলাম, কই যমের দুয়ারে তো ক🐷াঁটা পড়ল না! একা একাই বসে এসব নানান কথা ভাবছি আজ। এগুলো না জন্ম-জন্মান্তরের সম্পর্ক। আর কী হবে, এভাবে চলে গেল ছেলেটা…। আমি তো ওকে মায়ের মতোই স্নেহ করতাম, ও তা বুঝত। এই সুখ-স্মৃতি নিয়েই থাকব। আমাকে একবার একজন বলেছিলেন, এটা তো ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন। হিন্দু-মুসলিমের ভাই ফোঁটা। আসলে আমাদের গাইয়ে-বাজিয়েদের মধ্যে আবার হিন্দু-মুসলমান আবার কী! ব্রাহ্মণ-কায়স্ত এসব তো কোনওদিনই আমি ভাবিনি।
একবার আমেরিকাতে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি, রাশিদ বলল, ‘দিদি কী নেবে বলো, আমি তোমায় দেব…।’ কোথাও গেলে বলত, তোমার🌠 গাড়ি ছেড়ে দাও, আমার গাড়িতেই তুমি যাবে। ওকে আমি অন্যরকম ভালোবাসতাম। ও আমায় বাড়িতে ডাকত, বলত, ‘কী করছো চলে এসো, গান করো, আর বিরিয়ানি খাও’। এসব আর কখনও হবে না।