প্রথম ছবি 'ভূতের ভবিষ্যৎ'-এর সময় থেকেই দর্শকের মনে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছেন পরিচালক অনীক দত্ত। এরপর একে একে মুক্তি পেয়েছে, আশ্চর্য প্রদীপ, মেঘনাদবধ রহস্য, ভবিষ্যতের ভূত, বরুণবাবুর বন্ধু। আগামী ১৩ মে মুক্তি পাচ্ছে তাঁর নতুন ছবি 'অপরাজিত'। নতুন ছবি নিয়ে অনীক দত্তর মুখোমুখি HT বাংলা-র প্রতিনিধি অরুণাভ রাহারায়।
HT বাংলা: সত্যজিৎ রায়ের জীবন নিয়ে আপনার নতুন ছবি 🅠'অপরাজিত' ১৩ মে মুক্তি পাবে। সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে ছবি করার কথা কীভাবে মাথায় এল?
অনীক দত্ত: একটা ছবির ভাবনার উৎপত্তি কবে কোথায় সেটা আমার সব সময় মনে থাকে না। অনেকগুলো জিনিস মিলিয়ে একটা ছবির কথা মাথায় খেলে। প্রথম ছবির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। যারা ফিল্ম বানান তারা মনে হয় প্রতিনিয়ত প্লট নিয়ে ভাবেন। আমার একটি সস্পূর্ণ স্ক্রিপ্ট নিয়ে ছবি করা হয়নি এখনও, আর কোনও দিন হবেও না বোধ হয়। তবে এ ছবির ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার হল-- আমি হোয়াটসঅ্যাপে কয়েকটা টুকরো টুকরো সিꦫন পেয়েছিলাম, যা সত্যজিৎ রায় সম্পর্কিত। এটা একজন ডাক্তারবাবু লিখেছিলেন। আমি তাঁকে খুঁজে বের করি। আমাদের চারপাশে তো অনেক সত্যজিৎ ভক্ত আছেন। নানা প্রফেশনের মানুষ সত্যজিৎ রায়কে ভালবাসেন। সেই ডাক্তারবাবু শখ করে এটা লিখেছিলেন। আমি ওনাকে বললাম আপনি কি রিসার্চ করে সিনটা বানিয়েছিলেন? নাকি কিছুটা মন থেকেও? তিনি বলল﷽েন দুটোই!
আমরা অনেকেই সত্যজিৎ সম্পর্কিত লেখা পড়েছি। তার বাইরেও অনেক বই রয়েছে যা আমাদের পড়া হয়নি। ডাক্তার বাবু বললেন, কিছু কিছু জায়গা ভেবে নিয়েছিলাম! আমি তখন ভাবলাম এ রকম কাজ তো সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে করা মুশকিল। হয়ত কিছু একটা করলাম, তারপর আবার সবাই বলতে শুরু করবে-- করেছেনটা কী মশাই? কোথা থেকে পেলেন এসব? সব কৈফিয়ত দিতে হবে। যদিও 'অপরাজিত' বায়োপ☂িক নয়। সেই সিনগুলো আমাকে বারবার হন্ট করতে লাগল। যদি একটা কিছু করা যায়! আসলে সত্যজিৎ রায়ের জীবনটা এতই বিস্তৃত-- অনেকগুলো দিকে তাঁর অবাধ বিচরণ-- তাঁকে একটা ছবির মধ্যে ধরতে পারা বেশ দুষ্কর। প্রথম জীবনে বিজ্ঞাপনের জগতে কাজ করতেন। পাশাপাশি বইয়ের মলাট এবং ইলাস্ট্রেশন করতেন। এর মধ্যে একটা বই পড়ে তাঁর পছন্দ হয়ে যায়। এগুলো তো আমরা অল্প বিস্তর জানি।
এরপর আমার মাথায় দানা বাঁধল সত্যজিৎ রায়ের জীবনের একটা অংশকে নিয়ে ছবিꦅ করা যেতে পারে। তখন আমার মনে হল এক্ষেত্রে অবশ্যই সন্দীপ রায়ের অনুমতি নিতে হবে। বাবুদা আমার স্কুলের সিনিয়র। প্রথম ছবিতে খুবই সাহায্য করেছিলেন। গেলাম তাঁর কাছে। তিনি বললেন, অনেকেই এমন প্রস্তাব দিয়েছে তবে আমি এখনও কোনও ডিসিশন নিতে পারিনি। এরকম করে অনেকদিন চলে গেল। তারপর লকডাউন এল। লকডাউনে তো এমনিই বসে ছিলাম তখন স্ক্রিপ্টের খ💛সড়া ভেবে ফেললাম। রিসার্চে সহযোগিতা করলেন সত্যজিৎ রায় ভক্ত শ্রীপর্ণা মিত্র। তাঁর রায়বাড়িত যাতায়াত আছে। তিনি সত্যজিৎ সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন যা অনেকেই জানে না। আর আমেরিকার অধ্যাপক পৃথ্বীরাজ চৌধুরীও আমাকে হেল্প করলেন। হয়ে গেল স্ক্রিপ্টের কাঠামো।
সত্যজিৎ রায় সম্পর্কে কিছু কিছু গল্প বা ঘটনা লোকজনের মুখে মুখে ঘোরে-- কিন্তু তার কোনও লিখিত রেকর্ড অন্তত আমরা খুঁজে পাইনি। পথের পাঁচালীর কলাকুশলিরা বেশিরভাগ এখন আর নেই। একমাত্র যিনি যুবক ছিলেন সৌমেন্দু রায়-- তাঁর কাছে গেলাম। এখন খুবই অসুস্থ। তবু আমাদের যথেষ্ট এন্টারটেইন করলেন। অমায়িক মানুষ। পরে সত্যজিতের ক্যামেরাম্যান হয়েছিলেন। তাঁর কাছে কিছুটা ধারণা পেয়ে বুঝলাম আমি একটা দিকনির্দেশ পাচ্ছি। কোথা থেকে𓄧 আরম্ভ করব সেটা ঠিক করে ফেললাম একদিন। তারপর যা যা হওয়ার হল। একটা সময় ডিরেকটর তাঁর মানসচোক্ষে ছবিটা দেখতে পায়। এতদিনে বছর দুয়েক পেরিয়ে গিয়েছে। একদিন গিয়ে বাবুদাকে বললাম-- তুমি হয় হ্যাঁ বল, না-হয় না বল।
দুজনে মিলে আলোচনা করে ঠিক করল🌌♔াম, নামগুলো পালটে দেব। তাহলে সেটা আর বায়োপিক থাকবে না। সেক্ষেত্রে কারও অনুমতিও দারকার নেই। সেই অর্থে অপরাজিতকে বায়োপিক বলা যাবে না। কিন্তু আমি নাছোড়! বাবুদাকে বললাম, আমি তোমার অনুমতি ছাড়া ছবিটা করব না। ঘটনাপ্রবাহে এতটাই মিল রয়েছে য🎉ে নাম পাল্টালেও সবাই বুঝতে পারবে সত্যজিৎ রায়কে নিয়েই ছবি। পরে তো অভিনেতার চেহারাটাও মিলে গেল। বাবুদা আমাকে লিখিত অনুমতি দিলেন। তারপর কাজ শুরু হল। প্রডিউসারের কাছে গেলাম। একজনের কাছেই গিয়েছিলাম। ফিরদৌস হাসান। তাঁর সঙ্গে আমি আগেও একটা ছবি করেছিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বললেন এই ছবিটা আমি করতে রাজি। ব্যাস কাজ শুরু হয়ে গেল।