ছবির প্রচাܫরবিদ থেকে পরিচালক, অন্যতম শ্রেষ্ঠ নির্মাতা তরুণ মজুমদার। তাঁর প্রায়াণে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। সারা বিশ্বের সিনে দুনিয়ার মানুষ তাঁর ছবি ভালোবেসেছেন। চলচ্চিত্র জগতে তাঁর সঙ্গে স্ম🐬ৃতি জড়িয়ে রয়েছে অনেকের। শিল্পী চলে গেলেও নিজের তৈরি শিল্পের মাধ্যমেই বেঁচে থাকেন আজীবন।
তেমনি প্রয়াত তরুণ মজুমদারকে নিয়ে অনেক ♋স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্য়ায়ের। স্মৃতি হাতড়ে কলম ধরলেন পরিচালক-অভিনেতা। ফেসবুকের পাতায় তরুণ মজুমদার একটি ছবি পোস্ট করে একটি দীর্ঘ নোটে লিখেছেন, ‘১৯৯০ সাল। তখন সেন্ট জেমস্ স্কুলে পড়াতে শুরু করেছি। দুপুর দেড়টায় ছুটি হতো, রামলালদার ক্যানটিনে কিছু খেয়ে সোজা যেতাম এন. টি. ওয়ান স্টুডিও। সোজা ভিতরে ঢুকে বাঁ দিকে ঘুরলে দোতলা বাড়ি। ওপরে পরপর এডিটিং রুম। সেই বাড়ির নিচের ডানদিকের কোণের ঘর! আমার গন্তব্য। টেবিলের অন্য প্রান্তে অপেক্ষায় একজন মাস্টারমশাই। কম হাসেন। যখন হাসেন, তাঁর উত্তরে পালটা হাসির সাহস হতো না। কাছ থেকে কিছুদিন দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম তরুণবাবুকে। ওঁর জন্য একটি টিভির চিত্রনাট্য লেখার সুযোগ এসেছিল।’
‘রবিবার ছাড়া রোজ যেতে হতো। অনেক রঙয়ের ꧑কলম, পেন্সিল নিয়ে বসে মন দিয়ে সাজাতেন নিজের সব ༺পরিকল্পনা! আমি শুনতাম, নোট নিতাম। আমাকে ‘আপনি’ বলতে বারণ করেও লাভ হয়নি। এই রকম কয়েক মাস চলার পর অধৈর্য ছাত্রটি নানা বাজে অজুহাত দেখিয়ে পালালো! আমার তখন মনে ভীষণ তাড়া। জলদি সাফল্য চাই। ধ্যান, সাধনার সময় কৈ?’
‘পরে যখন টেলিফিল্মের দৌলতে একটু পরিচিতি হয়েছিল, তখন আবার যোগাযোগ তৈরি হয়। আমার প্রথম সিনেমা ওয়ারিশ-এর প্রিমিয়ারে প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্বোধন তরুণবাবু। মাঝে মধ্যে দেখা হলে জানতে চাইতেন কী করছি। বীরভূম বা পুরুলিয়ায় শুটিং করছি শুনলে খুব খুশি হতেন। গ্রামবাংলা তো তাঁর ছবির মেরুꦬদন্ড ছিল। ইচ্ছে ছিল লক্ষ্মী ছেলে মুক্তি পেলে তাঁকে দেখাবো, পুরুলিয়ার গ্রামের প্রেক্ষাপটে গল্প। এত দেরী হলো রিলিজ হতে, দেখানোর সুযোগ আর পেলাম না। যদি আদৌ কিছু ওঁর কাছে থেকে শিখে উঠতে পেরেছি, তা আমার সিনেমাই বলবে। তবে একটা গুরুবাক্য যা আজীবন ভুলবো না সেটা লিখে ওঁকে প্রণাম জানাই।’
‘উনি আমায় একবার কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘জীবন থেকে প্রয়োজনের প্রয়োজনটা কমিয়ে আনুন, ভালো থাকবেন।’ স্যর, আপ্রাণ চেষ্টা করেছি আপনার বেদবাক্য আজীবন পালন করতে। সত্যি বলতে এই সহজ কথার কঠিন কাজটা সব সময় করে উঠতে পღারিনি। আর পারিনি বলেই হয়তো আপনার ꦺমতো মাস্টারমশাই হয়ে উঠতে পারবো না কোনোদিন। একটাই কামনা আপনি যেখানেই গিয়ে থাকুন, সেখানে যেন গ্রাম থাকে, মাঠ থাকে, ধানক্ষেত থাকে, চাঁদ থাকে, আর যেন রবীন্দ্রসঙ্গীত থাকে। প্রণাম মাস্টারমশাই।’ (অপরিবর্তিত)
বাংলার পাশাপাশꦆি ভারতের নানা দিক থেকে তরুণ মজুমদারকে নিয়ে শোকবার্তা উঠে আসছে।