সোশ্যাল মিডিয়ায় কত কিছুই 🐻না ভাইরাল হয়! কিন্তু তাই বলে কেউ বিয়ের পর সেই বিয়ে নিয়ে নিজের ভাবনা শেয়ার করার পর যে এভাবে ভাইরাল হতে পারে কে জানতো! সেই যুবতীর পোস্ট নিয়ে সো♊শ্যাল মিডিয়া বর্তমানে আড়াআড়ি ভাবে দুই ভাগ বিভক্ত। কেউ কেউ তাঁর প্রশংসা করছেন, সমর্থন করছেন। কেউ আবার গেল গেল রব তুলেছেন। কিন্তু কেন? কী ঘটেছে?
কী ঘটেছে?
উষসী তিতির কর নামক এক যুবতী কিছুদিন তাঁর বিয়ের সাজের একটি ছবি পোস্ট করেন। সেটা পোস্ট করে তিনি তাঁর বিয়েতে কী কী করেছেন, কেন করেছেন, কোন ভাবনা থেকে করেছেন সেটা তুলে ধরেন। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, 'জ্ঞান হওয়া ইস্তক বিয়ে করার দুটো শর্ত দিয়ে রেখেছিলাম বাবা মাকে। এক, বাবার সারাজীবনের যাবতীয় সঞ্চয় নিঃশেষ করে সোনার গয়না কেনার অশ্লীল কাজটা আমি করবনা। দুই, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করবনা। দুট🌼োর জন্যই বিয়ে করার সময় অসংখ্য সমালোচনা শুনেছি মুখের উপর লড়াইটা একদিনের ছিল না। দিনের পর দিন অসংখ্য মানুষকে জবাবদিহি করতে হয়েছে। বাবাও পুরোই মেনে নেয়নি, কিছু গয়না আমায় কিনতে হয়েছে, রোজ পরার মতো টুকটাক। আর বিয়ের আগেরদিন পর্যন্ত নানাজনের থেকে শুনেছি নানান বাঁকা মন্তব্য। এখনও শুনছি। কিন্তু, আমার কোনও লজ্জা নেই এটা বলতে, যে বিয়ের দিন সাজার জন্য যা গয়না আমি পরেছি, তার ৯৫% ইমিটেশন। সিঁদুর, শাঁখা পলা, যজ্ঞ ইত্যাদি কিছুই স্থান পায়নি আমার বিয়েতে। আমি পিতৃতান্ত্রিক ধর্মীয় ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি না, আর উল্টোদিকে বাবাকে সারাজীবনের পরিশ্রম আমার গয়না কিনে জলে দিতে হোক, তাতেও বিশ্বাস করিনা। আর, আমার নিজেরও ক্ষমতা নেই। যেটুকু ক্ষমতা ছিল, শখ মিটিয়েছি।'
এরপরই শুরু হল প্রো এবং পাল্টা মন্তব্যের ঝড়। কেউ সনাতন ধর্ম গেল গেল রব তুলেছেন, তাঁদেౠর মতে এটা নাকি বিয়েই নয়। কারও মতে বেশ 𒅌করেছেন যুবতী। এটাই করা উচিত।
কে কী লিখছেন?
এক ব্যক্তি কটাক্ষ করে লেখেন, 'সবাই তাদের বিয়েতে মোটামুটি সবরকমের স্টিরিওটাইপ ভাঙছে। আমি ভাবছি বিয়েতে খাওয়ানোর স্টিরিওটাইপটা ভেঙে দেব।' তো আরেকজন প্রশংসা করে লেখেন, 'মানে বাবার সঞ্চয় ভাঙিয়ে গয়না গড়িয়ে বিয়ে না করলে বা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান না মেনে বিয়ে করলে ট্রোল হতে হবে। মেয়েটিকে তো পুরো পোস্টে এই দুটো জিনিস ছাড়া আর কিছুর বিরোধিতা করতে দেখলাম না। মেকআপ করবে না বলেনি, হল ভাড়া করবে না বলেনি, অনুষ্ঠান করবে না, লোক খাওয়াবে না, বিয়েতে টাকা ꧙খরচ করবে না, ফটোগ্রাফার রাখবে না বা ডেকোরেট করবে না বলেনি। তাই সে সেজেছে, সাজিয়েছে, লোক ডেকেছে, খাইয়েছে, ছবি তুলেছে, টাকা খরচ করেছে, বেশ করেছে। আর হ্যাঁ উনি কোথাও বলেননি এই সমস্ত কিছু তিনি বাবার টাকায় করেছেন। যিনি বাবার সঞ্চয় ভাঙবেন না বলে গয়না গড়াননি তিনি খুব স্বাভাবিক ভাবেই সেই সঞ্চয় ভাঙিয়ে উপরিউক্ত কর্মকান্ড করবেন না। এটাই খুব স্বাভাবিক। সিঁদুর না পরে, শাঁখাপলা না পরে একটা মেয়ে পিতৃতন্ত্রের বিরোধিতা করলো আর তাতে সবথেকে বেশি রেগে গেল কারা? মেয়েরাই।'
আরও পড়ুন: স্টার কিড হয়েও কিশোর কুমার কে সেটাই জানতেন না আলিয়া! ꦅপ্রথম দেখায় রণবীরকে কী প্রশ্ন করেছিলেন
কারও মতে, 'আজকালকার দিনের সোকল্ড শিক্ষিত, বাপের পয়সা বাঁচাতে তৎপর মামনিদের মেন্টালিটি - বাবার পয়সা বাঁচাতে ইমিটেশন পরবো, মন্ত্রপাঠ যজ্ঞি 🐭না করে বিয়ে করে পিতৃতান্ত্রিক সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফেসবুকে দু'দিনের সস্তার সেলিব্রেটি হব। তারপর? তারপর বাবা মায়ের কিংবা নিজের পকেট খসিয়ে - ভালো ফটোগ্রাফার বুক করে তাকে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ দেব যাতে সে আগামী কয়েকবছরের জন্য আমার ভালো কয়েকটা ডিপি ও কভার ফটোর কালেকশন করে দিতে পারে। ভালো মেক আপ আর্টিস্ট বুক করে তাকে চল্লিশ, ষাট হাজার দেব যাতে আমায় সেই কয়েকদিন দারুণ লাগে। এক থেকে দেড় লাখ দিয়ে ভালো জায়গা বুক করবো। পঞ্চাশ সত্তর হাজার দিয়ে জায়গাটাকে সাজাব। তিন সাড়ে তিন লাখ খরচ করে তিন-চারশো অযাচিত মানুষদের খাওয়াব। তারপর ফেসবুকে লিখব, দেখো দেখো আমি আমার বাবার পয়সা বাঁচিয়েছি, ইমেটিশনের গয়না পরেছি। সে ভাই তুই যা পারিস কর। কিন্তু আমায় আগে এটার উত্তর দে, বিয়ের মন্ত্র কবে থেকে পিতৃতান্ত্রিক সমাজের পরিচয় হলো? কবে থেকে সুখী দাম্পত্য জীবনের কামনা হেতু ঈশ্বরের নামে যজ্ঞি করা নেগেটিভ হল?' কেউ আবার বলেন, 'উষসী জানিয়েছেন সে তার বিয়েতে ম⛦া বাবার থেকে কোনও রকমের সোনা দানা নেননি কারণ তার মনে হয়েছে একজন বাবা মায়ের কোনও দায় পড়ে না নিজের সর্বস্ব ইনভেস্ট করে মেয়ের বিয়ের আয়োজন করা থুড়ি সামাজিক ভাষায় মেয়ের বিয়ে দেওয়ায়। দুই, সে এটাও জানিয়েছে যে হিন্দু ধর্ম মতে বৈবাহিক অনুষ্ঠানে যে সব নিয়মনীতি আছে, সে তার বিয়েতে সেসব পালন করা থেকে বিরত থেকেছে। এবং মনে রাখতে হবে এইসব কিছুই কিন্তু সে নিজের বিয়েতে করেছে, নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ওয়ালে পোস্ট করেছে। কিন্তু ওই যে বাঙালি! এ ক্ষেত্রেও রে রে করে ছুটে এল। একজন লিখলেন, সোনা দানা নেয়নি ঠিক আছে, সিঁদুর পরেনি তাও ঠিক আছে, কিন্তু যজ্ঞ করল না? তাহলে বিয়ে কী করে হল? আই অ্যানাউন্স ইউ অ্যাস হাসবেন্ড অ্যান্ড ওয়াইফ বলে! আমি বলি কি দুটো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ সদিচ্ছায় একসাথে থাকতে চাইলে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির সেই সম্পর্ককে আলাদা করে স্বীকৃতি দেওয়ার দরকারই পড়ে না। তারপরও আমাদের দেশের সংবিধান বলছে সিঁদুরদান ছাড়া, কবুল হে না বলেও, ইউ মে কিস দ্য ব্রাইডের অনুমতি না নিয়েও আইনি নথিপত্রে সই করে বৈবাহিক জীবন যাপন করা যায়। এবং যেই ধর্ম বা আইনের দোহাই দিয়ে উষসীর এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করা হচ্ছে, সেই ধর্মই কিংবা সেই আইনই এমন অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যারা একসঙ্গে থাকতে চায় তাদের থাকার অনুমতি দেয় না। তাই সেখানে দাঁড়িয়ে যদি ওই দুই মানুষের ইচ্ছেটাকেই যথেষ্ট বলে মনে হয়, তাহলে উষসীর বিয়েটা যজ্ঞ থেকে বিরত থাকলে ক্ষতি কী?'