GI ট্যাগ পেল অসমের রাইস ওয়াইন 'জুড়িমা'। অসমের ডিমাসা উপজাতির বহু বাড়িতে ভাত থেকে এই মদ তৈরি হয়। এটিই উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রথম জিআই ট্যাগপ্রাপ্ত ঐতিহ্যবাহী পানীয়।অসমে এক বিশেষ ধরনের ধান থেকে একটু চটচটে, আঠালো ধরনের ভাত তৈরি হয়। অর্থাত্ স্টার্চের পরিমাণ অনেকটাই বেশি থাকে এই ভাতে। এই ভাত থেকেই সবচেয়ে ভালো জুড়িমা তৈরি হয়। সাধারণ ডিমাসা উপজাতির মহিলারা এটি তৈরি করেন। ভাত প্রথমে ফার্মেন্টেশন (গাঁজন) করা হয়। এরপর এটি বাষ্পীভূত করে সংগ্রহ করা হয়। তাতে মেশানো হয় বিভিন্ন ধরনের জড়িবুটি। এর ফলেই অন্যান্য ধেনো মদের তুলনায় বেশ আলাদা, মিষ্টি একটি সুগন্ধ আসে জুড়িমায়। প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে এটি তৈরি করতে। ঠিক করে রাখলে বছরের পর বছর ভালো থাকে। স্থানীয় কিছু সংস্থা এগুলি বোতলে ভরে বিক্রিও করে। তবে তা খুবই ছোটো মাত্রায়।একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্যগুলিকে জিআই ট্যাগ প্রদান করা হয়। একটি জিআই চিহ্ন কোনও দ্রব্যের উৎপত্তিস্থল শনাক্ত করতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে প্রতিটি এলাকার বিশেষত্বও তুলে ধরে গোটা বিশ্বের কাছে। ঐতিহ্য যাতে হারিয়ে না যায়, তা সুনিশ্চিত করাও এর অন্যতম লক্ষ্য। 'জুড়িমার স্বীকৃতিতে আমরা আনন্দিত। এটি প্রায় তিন বছরের চেষ্টার ফল,' জানালেন অসমের দিফুর কৃষি উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রধান সুবোধ মাইবংশা।ইয়ুথ অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্টের (YADEM) হয়ে কাজ করেন সুবোধ মাইবংশা এবং তাঁর সহকর্মীরা। ২০১৮ সালের শেষের দিকে জিআই ট্যাগের জন্য আবেদন করেছিলেন তাঁরা। জুড়িমাকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি এনে দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য ছিল।গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক উত্তম বৈথারি বলেন, 'পরে আমরা বুঝলাম যে, একটি মহিলাদের গোষ্ঠীর মাধ্যমে আবেদন করা সেটা বেশি ভালো হবে (যেহেতু জুড়িমা ঐতিহ্যগতভাবে মহিলাদের দ্বারা তৈরি)। তাই আমরা ডিমাজিক হাসাও নামে একটি মহিলা গোষ্ঠী গঠন করেছিলাম। এরপর ফের ২০১৯ সালে এই ট্যাগের জন্য পুনরায় আবেদন করেছিলাম।' এই পুরো প্রক্রিয়াটায় তিনি সুবোধ মাইবংশাদের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি জানান, কোভিডের কারণে স্বীকৃতি ঘোষণা হতে এক বছর দেরি হয়েছে। নয় তো ২০২০ সালেই এই প্রাপ্তি হত। 'GI ট্যাগ পেয়ে গিয়েছি। ফলে আমরা এখন এটির ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করব। স্থানীয় লাউ আকৃতির বিশেষ বোতলে ভরে এটি বিক্রি করা যেতে পারে। স্বাদ, স্বাদ, টেক্সচার ইত্যাদি বজায় রেখেই সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্নভাবে এটির উত্পাদন নিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে স্থানীয় ডিমাসা উপজাতির কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাবে,' জানান তিনি।এর আগে আসামের তিনটি দ্রব্য জিআই ট্যাগ পেয়েছে। সেগুলি হল কাজি নেমু (এক ধরনের লেবু), জোহা ভাত (ভিন্ন স্বাদের চাল) এবং চোকুয়া চাল।