শিশির গুপ্তসংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে নেপালের। শাসক দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙনও কার্যত স্পষ্ট। আর তা রুখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে চিন। সেজন্য চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নির্দেশে তড়িঘড়ি কমিউনিস্ট পার্টির একটি উচ্চ পর্যায়ের দল রবিবার কাঠমান্ডুতে আসতে চলেছে। বিষয়টির সঙ্গে অবহিত আধিকারিকরা জানিয়েছেন, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির ভাঙন রুখতে ইতিমধ্যে চেষ্টা করেছেন নেপালে চিনের দূত হুই ইয়ানকি। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে বেজিংয়ে বার্তা পাঠান তিনি। তারপরই তড়িঘড়ি চার সদস্যের দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে প্রতিনিধিদল রবিবার কাঠমান্ডুতে পৌঁছাবে এবং চারদিন নেপালেই কাটাবে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির দু'পক্ষের (প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এবং পুষ্প কমল দাহাল 'প্রচণ্ড' গোষ্ঠী) গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে সেই দলের বৈঠক নির্ধারণ করেছেন ইয়ানকি। তবে চিনা প্রতিনিধিদের দলের সঙ্গে ওলি আদৌও দেখা করবেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যিনি ইতিমধ্যে চিনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিলেন। সঙ্গে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, সংসদ ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি যেহেতু সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন, তাই নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চিনের নাক গলানো উচিত নয়। কূটনৈতিক মহলের মতে, কঠোরভাবে জাতীয়তাবাদী মনোভাব নিয়েছেন ওলি। তার ফলে চিনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাঁর দেখা করার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। নেপালের এক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ওলির শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারেননি চিনা দূত। বরং প্রচণ্ডের সঙ্গে তাঁর একাধিক বৈঠক হয়েছে।ক্ষমতার লড়াই নিয়ে সেই প্রচণ্ডের সঙ্গে বিরোধ এবং শাসক দলের অভ্যন্তরে প্রবল চাপের মুখে গত ২০ ডিসেম্বর আচমকাই নেপালের সংসদ ভেঙে প্রস্তাব দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকে সেই প্রস্তাব পাশ হয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাতে দ্রুত অনুমোদন দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারী। নয়া বছরের ৩০ এপ্রিল এবং ১০ মে ভোট হবে বলেও ঘোষণা করে দেওয়া হয়। যদিও প্রচণ্ড এবং ওলির সম্পর্ক মেরামতের জন্য চলতি বছরে একাধিকবার চেষ্টা করেছে চিন। তাতে অবশ্য যে কাজ হয়নি, তা কাঠমান্ডুর সাম্প্রতিক ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও নেপালের কমিউনিস্ট পার্টিতে ভাঙন রুখতে চেষ্টার কোনও কসুর রাখতে চাইছে না বেজিং। কূটনৈতিক মহলের মতে, আমূল পরিবর্তন সত্ত্বেও যে নেতারা জোটবদ্ধ নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে আছেন, তাঁদের উপর বাড়তি গুরুত্ব আরোপ করতে পারে চিনা দল।তবে নেপালের সেই অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গনগনে আঁচ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে ভারত। নয়াদিল্লির তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এটি একেবারেই নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যা সেদেশের গণতান্ত্রিক উপায়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বৃহস্পতিবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছিলেন, প্রতিবেশি এবং ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ হিসেবে শান্তি এবং উন্নয়নের পথে সর্বদা নেপাল এবং সেদেশের মানুষকে সমর্থন জানাতে থাকবে ভারত।