করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশ্নের মুখে দাঁড় করানো হয়েছিল বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে। তা সত্ত্বেও সার্বিকভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের উপর দোষ চাপাননি শহুরে নেটিজেনরা। বরং গত এপ্রিল-মে মাসে অক্সিজেনের আকাল, মানুষের হাহাকারের মধ্যেও বিজেপির জনভিত্তি মোটামুটি অটুট আছে। ইউগভ-মিন্ট-পলিসি রিসার্চ (সিপিআর) মিলেনিয়াল সার্ভের ফলাফলে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে।গত জুন-জুলাইয়ে দেশের ২০৩ টি শহর এবং মফঃস্বলে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। অনলাইন সমীক্ষায় ১০,২৮৫ জনের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে ৪১ শতাংশ মানুষ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করেছেন। তবে ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, আবার মোদী যে চেষ্টা করেছেন, তা মোটেও উপেক্ষা করা যাবে না। সার্বিকভাবে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও একইরকম প্রতিক্রিয়া মিলেছে। মুখ্যমন্ত্রীদের উপর আস্থা রেখেছেন অধিকাংশ উত্তরদাতা। পাশাপাশি সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, বিজেপির জনভিত্তি মোটের উপর অটুট আছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নিরিখে মহামারী সংক্রান্ত ত্রাণের ক্ষেত্রে বিজেপি অনেক ভালো ফল করেছে (৩০ শতাংশ)। সেখানে ছয় শতাংশ উত্তরদাতা কংগ্রেসের ত্রাণমূলক কাজে সন্তুষ্ট হয়েছেন। জনগণের চোখে দোষীমাত্র ১২ শতাংশ উত্তরদাতা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, বাজেভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে রাজ্য। ২৬ শতাংশ উত্তরদাতা আবার মনে করেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণ হল কেন্দ্র। ৪৪ শতাংশ মানুষ অবশ্যই জানিয়েছেন, করোনা সংক্রান্ত বিধি সঠিকভাবে মেনে চলেননি আমজনতা। স্যানিটাইজেনশের বিধিও অমান্য করা হয়েছে। তাঁরাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী।কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের তাণ্ডবের মধ্যেও শাসক দলের প্রতি কীভাবে লাগাতার সমর্থন থাকতে পারে? সমীক্ষার ভিত্তিতে তিনটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন ইউগভ-মিন্ট-পলিসি রিসার্চ (সিপিআর) মিলেনিয়াল সার্ভের বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য সরকারের তুলনায় আমজনতাকে বেশি দোষারোপ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সরকারের থেকে জনগণের প্রত্যাশা কম। তাই সেই বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, তা কিছুটা সরকারের ‘ব্যর্থতাকে’ ধামাচাপা দিয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, দ্বিতীয় ঢেউয়ের বাড়বাড়ন্তের সময় মানুষ বেশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর বেশি নির্ভর করছিলেন। রাজনীতিবিদদের উপর সেভাবে নির্ভর করেননি। তৃতীয়ত, প্রথম ঢেউয়ের নিরিখে দ্বিতীয় ঢেউয়ে সম্ভবত মানুষের আর্থিক পরিস্থিতির উল্লেখজনকভাবে পরিবর্তন হয়নি। তাই তাঁরা হয়তো সরকারের ‘ব্যর্থতাকে’ ধর্তব্যের মধ্যে আননেনি। বিশেষত শহুরে নেটিজেনদের মধ্যে সেই সমীক্ষা হয়েছে। যা সমীক্ষার ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারেনি। গ্রামীণ এলাকায় সমীক্ষার ফল অন্যরকম হতে পারত।